ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

সূচীপত্রঃছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার | প্রতিদিন জল খাবারের পরে শরীর তা গ্রহণ করে এবং পরিপাকের পর তা আবার বর্জ্য হিসেবে বের হয়ে যায়। এর সাথে সমস্ত রক্ত গুলিকে পিউরিফাই করে কিডনি দূষিত পানিকে প্রস্রাব আকারে বের করে দেয়। কিন্তু এই প্রস্রাব যদি কোন কারণে নির্দিষ্ট সময়ে না হয়ে ঘন ঘন হয় তাহলে একটু বিরক্তর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

আবার অনেকের মধ্যে ঘন ঘন প্রস্রাব কিছুটা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বলে ও বিবেচনা করা হয়। আশা করি এতক্ষন বুঝে গেছেন যে কি নিয়ে কথা বলছি। হ্যা আমরা ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে কথা বলার জন্যে আজকের এই আর্টিকেল টি সাজিয়েছি যা আপনাকে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। 


আজকের এই নিবন্ধে থাকছে, ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়, ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সাধারণ কারণ, ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাবের পেছনে কিছু স্বাস্থ্যগত বিপদ, ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার ঘরোয়া প্রতিকার এবং আরো থাকছে ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্যে প্রতিরোধ ও জীবনধারার পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা ও সচেতন মূলক বার্তা। তাই আশা করি সাথেই থাকবেন। 

ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? কিছু সাধারণ কারণ 


ছেলেদের মধ্যে অনেকের ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা হয়ে থাকে, যা খুবই অস্বস্থিকর  এবং মাথাব্যথার কারণ। স্বাভাবিক জীবন জাপনের মধ্যেও অনেক সময় এই সমস্যায় পতিত হয়ে যায় আমরা। তবে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার পিছনে কিছু নির্দিষ্ট ও সাধারণ কারণ লুকিয়ে থাকে। 


এই কারণ গুলি যদি জানা থাকে তাহলে আমাদের সচেতন হওয়ার জন্যে খুবই উপকার হবে। চলুন তাহলে আমরা একটু জেনে আসি ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয় এবং কি সেই সাধারণ কারণে গুলি।   

ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন (UTI) 


ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণের মধ্যে ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন হচ্ছে একটি সমস্যা যা অনেকের মধ্যে হয় কিন্তু বুজতে পারে না। এই সমস্যা ছেলেদের মধ্যে তুলনামূলক কম হয়। 


তবে যদি এই সমস্যা হয় তাহলে নিয়মের চেয়ে একাধিকবার প্রস্রাব হবে। ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন হলে পেটের নিচে ব্যথা এবং জ্বালাপোড়ার মত লক্ষণ গুলি দেখা যায়।  

ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগারের প্রভাব


ডায়বেটিস বা ব্লাডসুগার হলে ও পুরুষের ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। কারণ ডায়াবেটিস এর বাংলা নাম হচ্ছে বহুমূত্র রোগ। তাই ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ডায়বেটিস এর প্রথম লক্ষণ। কারণ এই ডায়বেটিস হলে শরীর থেকে গ্লুকোজের মাত্রা জমে গেলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে নির্গত হয়ে থাকে। যার ফলে ঘন ঘন মূত্রত্যাগ হয়। 

প্রস্রাবের সংক্রমণ বা কিডনি সমস্যা  


অনেক সময় ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হিসেবে প্রস্রাবের সংক্রমণ বা কিডনি সমস্যাকে ও দেখা হয়। কিডনিতে পাথরের জমে গেলে বা কোন প্রদাহ হলে প্রস্রাবের পরিমান ও ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে করে প্রস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে। জ্বালা হতে পারে। 

অতিরিক্ত পানি পান ও ঠান্ডাজনিত কারণ


শরীরকে ডিহাইড্রেড রাখতে অনেকে বেশি বেশি পানি পান করে থাকে। এটি একদিক দিয়ে খুবই ভালো কিন্তু প্রস্রাবের পরিমান বেড়ে যায়। আবার ঠান্ডা আবহাওয়া হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে।  

ঘন ঘন প্রস্রাবের পেছনে কিছু স্বাস্থ্যগত বিপদ 


যদিও ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আমাদের এই নিবন্ধ আমরা শুরু করেছিলাম। প্রতিকারের বিষয়ে একটু পরেই যাচ্ছি। ঘন ঘন প্রস্রাবের পেছনে কিছু স্বাস্থ্যগত বিপদ নিয়ে আগে কথা বলি যেন খুব সহজে মানুষ সচেতন হতে পারে। 


অনেক ছেলেদের মধ্যে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা থাকলে ও অবহেলা করে চলেন। এই প্রস্রাবের অসুবিধা আপনাকে দীর্ঘ রোগে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। 


এই সমস্যা একটা সময় গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যার ইংগিত দিতে পারে। যা বড় কোন স্বাস্থ্যগত অসুখের পূর্বাভাস হতে পারে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক যে, ঘন ঘন প্রস্রাবের কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা। 

প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যা 


প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যার কারণেও পুরুষদের ঘন ঘন প্রস্রাব হয়ে থাকে। প্রোস্টেট গ্রন্থি বয়সের সাথে সাথেই বৃদ্ধি হয়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে benign prostatic hyperplasia (BPH)। এটি বার বার প্রস্রাবের চাপ তৈরি করে কারণ এটি মূত্রনালির উপর চাপ সৃষ্টি করে। 


বয়স্ক মানুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে অনেকের মধ্যে কম বয়সেও হয়ে থাকে। যার ফলে রাতের ঘুমের সময় ও অনেকবার প্রস্রাব করতে উঠতে হয় যা খুবই বিরক্তির কারণ। জীবন যাত্রার মান ব্যহত করে।  

স্নায়ুবিক সমস্যা বা মানসিক চাপ 


স্বাস্থ্যগত সমস্যার মধ্যে মানসিক চাপ স্নায়ুবিক সমস্যাও ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে স্নায়ু মূত্রাশয়ের সংকেত সহজে গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয় যার ফলে প্রস্রাবের পরিমান ও ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি পাই। এইক্ষেত্রে মানসিক অস্তিরতা, দুশ্চিন্তা ও মনের কুচিন্তা ও দায়ী। 

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া


অনেক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাদের মধ্যে বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ আছে এবং যারা ওষুধ সেবন করেন, তাদের মধ্যেও ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যেকোনো ঔষধ শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


ভবিষ্যতে এই ধরনের জঠিলতা থেকে মুক্তি পেতে অবহেলা না করে যথাযত ভাবে চিকিৎসা নেওয়া খুবই জরুরি। যাতে করে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা থেকে বাঁচতে পারেন এবং জীবনযাত্রার মান সুন্দর হয়।  

ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার ঘরোয়া প্রতিকার 


ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে কথা বলতে বলতে আমরা কারণ শেষ করে ঘরোয়া প্রতিকার নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। ঘন ঘন প্রস্রাব যদিও সাধারণ সমস্যা তারপর ও বলবো এই সমস্যার জন্যে সব সময় ঔষধের প্রয়োজন পড়ে না। 


আমরা চাইলে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার  ঘরোয়া ভাবে প্রতিকার করতে পারি। কিছু স্বাভাবিক ও সহজ নিয়ম মেনে চললেই এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। চলুন তাহলে কি জেনে আসি কি সেই প্রতিকারের নিয়ম।   

পর্যাপ্ত পানি খাওয়া ও সঠিক খাবার নির্বাচন  


পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা এবং সঠিক খাবার খাওয়া আমাদের একাধিকবার প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে পারে। অনেকের ভ্রান্ত ধারণ রয়েছে যে, ঘন ঘন প্রস্রাব হচ্ছে মানে বেশি পানি পান করা যাবে না। আসলে কিন্তু তা নিয়ম নয়। কোনো প্রকারে শরীরকে হাইড্রেটেড করা যাবে না। 


তবে হ্যা অতিরিক্ত ক্যাফেইন, চা, মসলা এবং কোমল পানীয় জাতীয় খাদ্য আপনার প্রস্রাবের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এই সব বাদ যেমন ফলমূল, সবজি এবং ভাত ও দিয়ে হালকা খাবার খেতে পারেন। 

তুলসীপাতা ও মধু খাওয়ার উপকারিতা 


আমাদের পাশেই অনেক ঔষধী গুন্ সম্পন্ন উপাদান রয়েছে যা আমাদের বার বার প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে পারে। তার মধ্যে প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা অনুযায়ী আপনি চাইলে প্রতিদিন তুলসীপাতা ও মধু খেতে পারেন। 


সকালে ঘুম থেকে উঠে কয়েকটি তুলসী পাতা ধুয়ে চিবিয়ে তার সাথে কয়েক ফোটা মধু খেয়ে নিতে পারেন। কারণ তুলসীপাতা এবং মধু মূত্রনালির জীবাণু দূর করতে খুবই উপকারী। 

মূত্রনালির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা


প্রত্যহ একবার করে হলেও যৌনাঙ্গ পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে সংক্রমণ হতে পারে, যা ঘন ঘন প্রস্রাবের একটি কারণ হতে পারে। সুস্থ জীবনের জন্যে পরিষ্কার পরিচ্ছনতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 


ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার ঘরোয়া প্রতিকারগুলো প্রতিদিন মেনে চললেই অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতিরোধ ও জীবনধারার পরিবর্তন  


প্রতিদিনের জীবনযাত্রার মান ব্যাহত করা থেকে শুরু করে শারারিক অস্বস্তি তৈরী করে এই ঘন ঘন প্রস্রাব। তবে সঠিকভাবে জীবন কে পরিচালিত করলে বা জীবনধারা অনুসরণ করলে অনেক প্রতিরোধ করা যায়।   


সঠিকভাবে খাদ্যাভ্যাসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন অতিরিক্ত মসলা, অতিরিক্ত ঝাল এবং তার সাথে প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের শরীরের মূত্রনালীকে খুবই উত্তেজিত করতে পারে। 


তাই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করুন। যেমন প্রচুর পরিমানে শাকসবজি থেকে শুরু করে ফলমূল এবং ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এরসাথে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করার  অভ্যাস করুন। নিজের জীবনধারাকে পরিবরতন করুন। 


প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস করুন এবং সাথে হালকা ব্যায়াম করার প্রবণতা তৈরি করুন। অনেকে সাইকেল চালানোর অভ্যাস করেন এটি খুবই ভালো অভ্যাস। কারণ সাইকেল চালানো ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং প্রস্রাবের নিয়মিততা বজায় রাখে। 


মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। যেহেতু স্নায়ুবিক চাপ ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা বাড়িয়ে তুলে সেহেতু ধ্যান করার অভ্যাস করুন এবং মনকে শান্ত রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 


যা কিছু পানীয় মুত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে সেসব পানীয় বর্জন করুন। যেমন চা, কফি, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় থেকে নিজেকে দূরে রাখুন যেহেতু এই খাবার গুলি ঘন ঘন প্রস্রাবের জন্যে দায়ী। 


জীবনধারায় এসব ছোট ছোট পরিবর্তন ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

উপসংহার: ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব অবহেলা নয়, সচেতন হোন

ছেলেদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে এতক্ষন এই আর্টিকেলে যা কিছু বলা হয়েছে তা যদি ভালো করে পালন করেন তাহলে এই সমস্যা নিয়ে আর তেমন কোন চিন্তা থাকবেনা। তাই সময় থাকতে অবহেলা নয় সচেতন হন এবং নিজেকে ভালোবাসুন নিজের জীবন ধারার পরিবর্তন করুন। আর হ্যা আমাদের কে লিখতে ভুলবেন না। কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করুন ইমেইল করুন। ভালো থাকবেন ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪