হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয় গুলি জেনে রাখুন
সূচীপত্রঃহঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয় কি এবং কেন বেড়ে যায় হার্টবিট, কারন কি ?সবকিছুর সমাধান পাবেন আমাদের এই আর্টিকেলে। তাই সচেতনতার জন্যে জানা জরুরি বলে আমরা মনে করি । হৃদযন্ত্রের আরেক নাম হচ্ছে হার্ট, যা প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে রয়েছে।
এই হার্ট প্রত্যেক সেকেন্ডে রক্ত প্রবাহিত করে মানবশরীরকে সুস্থ রাখে। যদি হার্টের নির্দিষ্ট সময় প্রণালীর কার্যকারিতার মধ্যে কোন রকমের ত্রুটি দেখা যায় তাহলে ঘটে নানা ঝামেলা । তাই হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয় কি সেই বিষয়ে আজকের আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ কি এবং কেন বেড়ে যায়
হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ জানার জন্যে অনেকে এই নিবন্ধে এসেছেন। তবে আমাদের প্রায় মানুষের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয়। এখন কথা হচ্ছে হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ কি এবং কেন বেড়ে যায় আর হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয় কি ?
মানবশরীরের হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এক্ষেত্রে হার্টবিট নিয়ে একটু চিন্তা আমাদের মধ্যে থেকে যায়। আসলেই হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণ কি ?
প্রত্যেক মানবদেহের মধ্যে এই হার্টবিট একটা নির্দিষ্ট নিয়ম বা সময় মেনে চলে। এক্ষেত্রে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার পর্যন্ত হৃদযন্ত্র পাম্প করে থাকে। এর চেয়ে যদি হার্টবিট বেড়ে যায় বা কমে যায় তাহলে শুরু হয় বিপত্তি বা দুশ্চিন্তার কারণ।
এই হৃদযন্ত্র অনেগুলি কারণে মাত্রা বেড়ে যায়। তারমধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা। টেনশনের কারণে অথবা ভয় পাওয়ার কারণে শরীরের অ্যাড্রেনালিন নির্গমন হয় যা হৃদয়কে দ্রুত স্পন্দন করার জন্যে বাধ্য করে। এছাড়াও আরো অনেক কিছু কারণ রয়েছে যে মন কফি এবং এনার্জি ড্রিংকস অথবা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় খেলেও হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে।
আবার উপরোক্ত কারণ গুলি ছাড়াও হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। যেমন শরীরিক কসরত করলে বা পরিশ্রম করলে, দৌড়ালে, লাফালাফি করলে এবং ভারী কাজ করলেও। তবে এই হার্টবিট বৃদ্ধি পেলে ও চিন্তার কোন কারণ নেই কারণ যদি আপনার বুকে ব্যাথা বা স্বাস কষ্টের কোন সমস্যা না হয়ে থাকে।
জ্বর, সংক্রমণ এবং থাইরয়েডের সমস্যা থাকলেও হার্টবিট বেড়ে যায়। আবার কারো মধ্যে যদি রক্তশূন্যতা থাকে তখন শরীরে খুব অক্সিজেনে প্রয়োজন হয় তখন ও হার্টবিট বেড়ে যায়।
একটি বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার যে, যদি অস্বাভাবিক হার্টবিটের সাথে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয়
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিড বেড়ে গেছে কিনা তা আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে গর্ভবস্থায় থাকা বাচ্চার হার্টবিট নির্ণয় করা হয় এবং এছাড়া ও কিছু লক্ষণ দেখা গেলেও বুঝা যায় । একটি শিশুর গর্ভবস্থায় সাধারণ ভাবে মিনিটে ১২০ থেকে ১৬০ এর মধ্যে থাকে।
তবে এই হার্টবিট যদি ১৮০ বা তার বেশি হয় তাহলে ফেটাল ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয় এবং এতে বলা হয় যে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট বেড়েছে যা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমরা এখন জানবো গর্ভবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট বেড়ে গেলে করনীয় কি ?
- প্রথমে যদি দেখেন যে বাচ্চার হার্টবিট বেড়েছে বা অস্বাভাবিক লাগছে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে পরামর্শ করুন ।
- যদি বিশ্রামের প্রয়োজন পড়ে তাহলে পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম করুন কারন অতিরিক্ত কাজের চাপ গর্ভস্থ শিশুর হার্টবিট বাড়িয়ে তুলতে পারে ।
- প্রচুর পরিমানে জল পান করুন কারন মায়ের শরীরের জলের অভাবে বাচ্চার হার্টবিট বৃদ্ধি করতে পারে ।
- ভারী কাজ করা থেকে দূরে থাকুন প্রয়োজনে হালকা কাজ করুন ।
- ভালো প্রোটিন রয়েছে এমন খাদ্য গ্রহন করুন ।
- মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টায় থাকুন কারন মানসিক চাপ গর্ভাবস্থায় বাচ্চার হার্টবিট বাড়িয়ে তুলতে পারে ।
- ক্যাফেইন জাতীয় খাবার এবং অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন যেমন কফি, কোল্ড ড্রিংস এবং মদ্যপান ।
- নিয়মিত চেকআপ করুন এবং সচেতন থাকুন ।
হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয় কি
- বিচলিত না হয়ে একটু স্থির হওয়ার চেষ্টা করুন ।
- পর্যাপ্ত জল পান করুন ।
- নিশ্বাস ধীরে ধীরে নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং প্রশ্বাস ধীরে ধীরে ফেলুন এতে করে হার্টবিটের মাত্রা অনেকতা কমে যাবে ।
- একদম সমতল জায়গা কিছুক্ষন হাঁটাচলা করুন ।
- মনের দুশ্চিন্তা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন কারন মানসিক চাপে ও হার্টবিট বৃদ্ধি পাই ।
- পজিটিভ চিন্তা করুন যেন না শব্দটি মনে না আসে ।
- সব কিছুকে সহজ ও সরল ভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করুন ।
- ভালো করে পানি দিয়ে স্নান করে ফেলুন ।
- যদি গরম কাল থাকে তাহলে হালকা ঠান্ডা জল পান করতে পারেন ।
- মানসিক দুঃখ বা অবসাধ থাকলে কারো কাছে শেয়ার করুন ।
- একটু ধ্যানে বসুন ।
- যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে না আসে বা অস্বাভাবিক বলে মনে হয় তাহলে দ্রুত কার্ডিওলজির সাথে যোগাযোগ করুন ।
শিশুর হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয়
- যদি খেলাধুলায় বা লাফালাফি ও দৌড়ঝাঁপের কারনে হার্টবিট বেড়ে যায় তাহলে একটু শান্ত রাখার চেষ্টা করুন বা বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন ।
- শিশুর হার্টবিট বেড়ে গেলে শান্ত পরিবেশে রাখুন এবং স্থির করুন এতে করে হার্টবিটের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যাবে ।
- অরিতিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার থেকে বিরত রাখুন যেমন কোল্ড ড্রিংস ( কোকা কোলা, পেপসি, সেভেন আপ, মজো ইত্যাদি ) এবং কফি ।
- গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার পদ্বতিগুলি শিখিয়ে দিন ।
- পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং সাথে পানি পান করার অভ্যাস গঠন করুন ।
- তবে জন্মগত ভাবে যদি হৃদরোগের রোগী হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন ভালো বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে পারেন ।
হঠাৎ ঘুমের মধ্যে হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয়
- ঘুম থেকে উঠে আগে ঠান্ডা জল পান করুন ।
- দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন ।
- জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন ।
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন ।
- উত্তেজিত মনকে শান্ত রাখুন ।
- গভীর ধ্যান এবং প্রানায়ামের অভ্যাস করুন ।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন ।
- যদি এই ঘুমের মধ্যে হার্টবিট বেড়ে যাওয়া নিয়মিত হয়ে যায় তাহলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে যোগাযোগ করুন ।
হার্টবিট কমে গেলে করণীয় কি
- হার্টবিট কমে গেলে আগে দেখতে হবে হঠাৎ কমে গেছে নাকি নিয়মিত কমে যায় ।
- নিয়মিত হার্টবিট কমে গেলে ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া জরুরি ।
- হঠাৎ কমে গেলে হার্টবিট স্বাভাবিকের জন্যে একগ্লাস স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে ।
- পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম করুন ।
- মানসিক অবসাদ দূর করার চেষ্টা করুন ।
- নিয়মিত ঘুম ও সঠিকভাবে খাদ্য নিশ্চিত করুন ।
- যদি কোন ওষুধ খাওয়ার প্রতিক্রিয়া থেকে হার্টবিট কমে যায় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে ওষুধের পরিমান বা ও ওষুধ পরিবর্তন করুন ।
- স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করার অভ্যাস গঠন করুন এবং সাথে শারীরিক ব্যায়ামের অভ্যাস করুন ।
হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয় এই নিয়ে শেষ মন্তব্য
হঠাৎ হার্টবিট বেড়ে গেলে করণীয় নিয়ে আমরা এই আর্টিকেলে অনেক কিছুই শেয়ার করেছি। হার্টবিট বেড়ে গেলে নয় শুধু হার্টবিট কমে গেলেও কিছু সমাধান বলেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে।
আর, ভালো লাগলে আমাদের কে কমেন্ট এবং ইমেইল করতে ভুলবেন না। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এবং নিজের হৃদপিন্ডকে সাবধানতা অবলম্বনের মাধ্যমে ভালো রাখুন।
বিপজ্জনক হার্ট রেট বনাম সাধারণ হার্ট রেট: পার্থক্য জানুন
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url