সময় গেলে সাধন হবে না লালন গীতি
কারণ হচ্ছে মহাত্মা লালন সাঁইজির এই গান গুলি হলো নিজেকে খুঁজের পাওয়ার গান এবং অধ্যাত্ম গান। যা যুগে যুগে মানুষ ব্যাকুল হয়ে এর ভাব এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমরা সময় গেলে সাধন হবে না এই লালন গীতি ব্যাখ্যা তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।
সময় গেলে সাধন হবে না দিন থাকিতে দ্বীনের সাধন কেন করলে না
সময় গেলে সাধন হবে না। সময় কি আর অসময় কি এই কথা আগে জানতে হবে। সময় হলো দেহের শক্তি বা ক্ষমতা অথবা বল যতদিন থাকবে ততদিন হলো সময়। সেটা বিশেষ করে নির্দেশ করে ৪০ বছরের নিছে ।
এই ৪০ বছরের পরে মানুষের দেহের মধ্যে ভাটা পড়ে যায় । ভাটা বলতে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলির কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়। তাই ৪০ বছরের উর্ধে বলে অসময়। আর ৪০ বছরের নিচে বলে সময় ।
সেই সময় হচ্ছে মানুষের দেহে বল থাকে, শক্তি থাকে এবং ক্ষমতা থাকে। এই সময় বিশেষ করে নিজের শরীর দিয়ে পরমাত্মার জন্যে বা দ্বীনের জন্যে কাজ করতে হয়। কি কাজ ? তার কাজ হলো সাধনা করা ।
দ্বীনের জন্যে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। যা কেবল মাত্র দেহের মধ্যে বল থাকলেই সম্ভব। তাই লালন ফকির বলেছেন দিন থাকতে দ্বীনের সাধন কেন করলে না। এখানে দ্বীন মানে হলো পরমাত্মা বা ঈশ্বর অথবা সৃষ্টিকর্তা কে নির্দেশ করেছেন বাউল সাধক ।
আরও পড়তে পারেনঃ চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে আমরা ভেবে করব কি ?
জানোনা মন খালে বিলে থাকেনা মীন জল শুকালে, কি হবে আর বাঁধন দিলে শুকনো মোহনা
যেখানে জলেই নেই সেখানে কিভাবে আর মীন মানে হলো মাছ থাকবে। এটা সবাই জানি কিন্তু মাহাত্ম কি? মাহাত্ম হলো আপনার দেহের মধ্যে যখন শক্তি থাকবেনা শীত কালে মানে আমাদের দেহের মধ্যে যখন সব কিছু শীতল হয়ে যাবে শরীর যখন যৌবনের গতি থাকবেনা তাহলে কি আর সেখানে ভাব থাকবে ।
অথবা এই দেহের মধ্যে ঈশ্বরের জন্যে প্রেম থাকবে ? না সেই সময় আর এই দেহের মধ্যে প্রেম ভাব ভালোবাসা কিছুই থাকবে না। কারণ তখন আপনার দেহ অনেক কষ্ট করে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন ।
আর জোর করে যদিও মন্দির মসজিদ কিংবা তীর্থে জান তারপর ও আপনার মনের মধ্যে প্রেম ভক্তির উদয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ জোর করে কিছুই হয় না। প্রেম ভক্তি বা ঈশ্বরের সাধনা সব কিছুই । আর শুকনা মোহনা বলতে মোহনা হল নদী । নদী যেখানে শকনো সেখানে আপনি আর কি বাধন দেবেন । কোন লাভ নেই ।
অসময়ে কৃষি করে মিচামিচি খেটে মরে গাছ যদিও হয় বীজের জোরে ফল ধরেনা
অসময়ে যদি কৃষি কাজ করলে তাতে ফল ধরে না। তাহলে পৃথিবীর সুসময় কখন ? ফসল রুপন করার যেমন নির্দিষ্ট সময় থাকে, থাকে বলে সুসময়। কিন্তু অসময়ে যদি আপনি কৃষি করেন তাহলে তাতে ফল ধরবে না ।
আবার যদি আপনি সার দিয়ে বীজ রুপন করলেন কিন্তু তাতে হয়ত গাছ হবে কিন্তু ফল ধরবে না। এইজন্যে সব কিছু সময়ে করতে হয়। আমাদের এই মন হচ্ছে কৃষি জমির মত ।
এই মনের মধ্যে যে চিন্তার মাধ্যমে আপনি বীজ রুপন করবেন ঠিক আপনার মন এবং মানসিকতা সেরকম ভাবে তৈরী হবে। সুন্দর চিন্তার মাধ্যমে যদি মনের মধ্যে বীজ রুপন করেন তাহলে আপনার আর ভয় নেই। কিন্তু এই চিন্তা আপনাকে সময়ে করতে হবে ।
অসময়ে যদি আপনার চিন্তার বীজ বুনেন তাহলে তাতে আর ফল ধরবে না। অর্থাৎ আর চাইলে ও আপনি কখনো সৎচিন্তা করতে পারবেন না। তাই অসময়ে মনের মধ্যে ভাল চিন্তার বীজ বপন করলেও জোর করে তাতে আর সৎচিন্তা আসে না ।
আরও পড়তে পারেনঃ মনরে বুঝাব কত যে পথেতে মরন ফাঁসি সেই পথেতে মন সদায় রত
অমাবস্যায় পূর্ণিমা হয় মহাযোগ সেই দিনের উদয় লালন বলে তাহার সময় দন্ডোমা রয় না
সময় গেলে সাধন হবে না লালন গীতি এই গানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই জানার বিষয় হচ্ছে এই পংক্তি। অমাবস্যায় পূর্ণিমা হয় মহাযোগ সেই দিনের উদয় লালন বলে তাহার সময় দন্ডোমা রয় না ।
অমাবস্যার সময় পূর্ণিমা হওয়া প্রকৃতির বিরুদ্বে কথা। কিন্তু বাউল সম্রাট মহাত্মা লালন সাঁইজির এই রূপক কথার মধ্যে অসাধারণ ব্যাখ্যা গুপ্ত রয়েছে। এখানে জীবনের সময় এর উপর যখন এই গানটি রচনা করেছেন ।
সেহেতু অমাবস্যা শব্দের অর্থ বুজতে হবে। অমা শব্দের অর্থ হচ্ছে অন্ধকার। পৃথিবীর ৩০ দিনের মধ্যে একটি অমাবস্যা আসে আবার একটি পূর্ণিমা আসে। আমাদের এই দেহের মধ্যে মন সর্বদা অন্ধকারে থাকে।
মনে কুচিন্তা সংসারের চিন্তায় ডুবে তাকে। মানে অন্ধকারে থেকে। কিন্তু পূর্ণিমা চন্দ্রের আলোর মত উজ্জ্বল। আমাদের এই মনের অমাবস্যায় পূর্ণিমার চন্দ্রের আলোর মত ভাবের আবেশ ঘটলে তখন আমাদের মধ্যে বৈরাগ্যের সৃষ্টি হয় ।
যে অন্ধকারে পূর্নিমার চন্দ্রের মত আলো জ্বললে দিনের উদয় হয় । মানে দিনে যেমন সূর্যের আলোতে সমস্ত অন্ধকার দূর হয়ে যায় । ঠিক তেমন করে পুর্নিমার চন্দ্রের আলোতে সমস্ত অজ্ঞেনতার অন্ধকার দূর হয়ে দিনের মত আলোর উদয় হবে ভাবের মাধ্যমে এবং বৈরাগ্যের মাধ্যমে ।
সেই বৈরাগ্যের উদয় হলে কোন বাঁধা থাকে না । তখন তাকে মহাযোগ বলে । মহাযোগ এই কারনে বলা হয় যে, যে যোগ মানে হলো যুক্ত হওয়া। ভাবের মাধ্যমেই তার সাথে মানে পরমাত্মার সাথে মিলন সম্ভব বা যোগযুক্ত হয় তাই তাকে মহাযোগ বলা হয় ।
এই মহাযোগে থাকার সর্বদা চিন্তা আমাদের সেই পরমপুরুষের সাথে সাক্ষাৎ হবে। এটি হলো মহাভাব। যে ভাবে জগৎকে জানা যায়। আমাদের এই অন্ধকার মনের ঘরে ভাবের মাধ্যমে পূর্ণিমার আলো উদয় হবে এবং আমাদের সাথে সেই মহাযোগের মাধ্যমে তার সাথে সাক্ষাৎ হবে ।
সময় গেলে সাধন হবে না লালন গীতির সারমর্ম
সময় গেলে সাধন হবে না এই গান অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং মানুষের হৃদয়ের আর্তনাদের গান। আমাদের জীবনের সময় আমরা যে সংসারের প্রিয় মানুষের জন্যে ব্যয় করছি সেটা একদম করণীয় নই ।
যার জন্যে আমাদের এই সময় ব্যায় করার কথা তা করতে পারছি না। তাই দেহের যৌবন থাকতে তার জন্যে উপযুক্ত কাজ করতে হবে মানে সাধন করতে হবে। প্রত্যেক কিছুর একটা সুসময় থাকে ।
দিন থাকিতে দ্বীনের জন্যে সাধন করতে হবে। দ্বীন বলতে যিনি আমাদের এই ভবসংসার থেকে পরিত্রান করবে তার কথা বলা হয়েছে। তার জন্যে আমাদের সাধন করতে হবে। তিনিই আমাদের পরিত্রাতা ।
কারণ অসময়ে সাধন হয়না। শরীরের ক্ষমতা যখন দুর্বল হয়ে যায় তখন আর এই দেহ অনুকূলে থাকবে না । আমাদের প্রকৃতি বিরুদ্বে আচরণ করবে। তাই অসময়ের সাধন করা যায় না বলেছেন তিনি বার বার ।
যদিও আমরা জোর করে এই শরীর কে চালাতে চায় তাহলে তা কিন্তু কাজ করবে না। কারণ জোর করে কিছু হয় না। তাই যতদিন পৃথিবীতে আছি আমাদের কে সেই পরমাত্মার ভাবে ডুব দিতে হবে ।
ডুব দিতে জানলে এই অমাবস্যায় ও পূর্ণিমার উদয় হবে। মানে অন্ধকার জগতে ভাবের মাধমে পূর্ণিমার উদয় করতে হবে তাহলে মহাযোগের উদয় হবে এবং আমরা তার সাথে যোগোযোক্ত হতে পারবো ।
আপনার জন্যেঃ বুদ্ধ পূর্ণিমা আর বৈশাখী পূর্ণিমা কি এক ?
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url