রক্তের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
তাই আজকে আমরা রক্তের এলার্জি কি এবং রক্তের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বলার চেষ্টা করবো। সাথে রক্তে এলার্জির স্বাভাবিক মাত্রা কত, রক্তে এলার্জি পরীক্ষা নাম, রক্তে এলার্জি থাকলে কি কি খাওয়া যাবে না, কি খেলে রক্তে এলার্জি কমে,রক্তে এলার্জির ভ্যাকসিন, রক্তে এলার্জি কমানোর ঔষধ এবং শিশুর রক্তে এলার্জি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। সবশেষে ত্বকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে সাথে থাকবেন ।
রক্তের এলার্জি কেন হয়
রক্তের এলার্জির সমস্যা এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। রক্তে এলার্জি অনেক কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে আমাদের দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া, পারপার্শিকতা, আহার এবং সর্বোপরি চলাফেরার কারণেও এলার্জি হয়ে থাকে ।
- এলার্জি যুক্ত খাবারের মাধ্যমে রক্তে এলার্জি হয়ে থাকে।
- বিভিন্ন ঔষধ খাওয়ার পর ও ঔষধের মাধ্যমে রক্তে এলার্জি হয়ে থাকে পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে।
- পোকা মাকড়ের কামড়েও রক্তে এলার্জি ছড়িয়ে পড়ে।
- ধুলাবালি থেকেও রক্তে এলার্জি হয়।
- বিভিন্ন ফুলের পাপড়ির ছোয়ার কারণে ও এলার্জি হয় ।
আরো ভিবিন্ন রকম অজানা কারণেও রক্তে এলার্জি হয়ে থাকে তা পরীক্ষার মাধ্যমে জানা সম্ভব ।
রক্তে এলার্জি কি এবং রক্তের এলার্জি লক্ষণ গুলি কি
রক্তে এলার্জি একটি বিরল এবং জটিল শারীরিক অবস্থা যা রক্তের বিভিন্ন উপাদানের সাথে মিশে শরীরের বাহ্যিক অংশে পরিলক্ষিত হয়।
রক্তে এলার্জি হলে শরীরের বাইরে কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যায় বা লক্ষণ হিসেবে আমরা বিবেচনা করে থাকি। কারণ এলার্জি রক্তে থাকে তা দেখা যায় না। লক্ষণের মাধ্যমে মানুষ চিনে থাকে ।
- রক্তে এলার্জি হলে শরীরের অস্বাভাবিক জ্বর দেখা যায়
- শরীরের অনেকাংশে ফুরফুরির বা ফুসকার মত দেখা যায়
- অনেক সময় শরীরে লালচে দাগ দেখা যায় রক্তে এলার্জির কারণে।
- সর্দি ও থাকে যা সাইনোসাইটিস এ রূপ নেয়
- তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা যায় এবং অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়
- রক্তচাপ কমে যায়
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি দেখা দেয়
- বমি বমি ভাব ও দেখা যায়
রক্তে এলার্জি পরীক্ষা নাম এবং রক্তে এলার্জির স্বাভাবিক মাত্রা কত
তবে সাধারণ রক্তের এলার্জির যেই পরীক্ষা তার নাম হচ্ছে ইমিউনোগ্লোবুলিন ই (IgE) টেস্ট। যা দিয়ে এন্টিবডির মাত্রা পরীক্ষা করা হয় এবং যা এলার্জির মাত্রা নির্দেশ করে।
এলার্জির লক্ষণ যদি লালচে ফুসফুড়ির মত হয়ে থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে স্কিন প্রিক টেস্ট করা হয়ে থাকে ।
রক্তের এলার্জির মাত্রা জানতে হলে পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। কারণ মানুষের শরীরে রক্তে এলার্জির মাত্রা বৃদ্ধি পেলে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে সেই মাত্রা বুজা যায় একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে। তাই রক্তের এলার্জির স্বাভাবিক মাত্রা কত সেটা জানতে চাই।
আসলে রক্তের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ১২০ পয়েন্ট এর মধ্যে। যা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্যে হতে পারে। আর ছোট শিশুদের জন্যে হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের থেকে ২০% কম। এই পরীক্ষা দিতে শুধু আপনাকে রক্ত প্রদান করতে হবে। রক্তের বিভিন্ন উপাদান থাকে তার মধ্যে থেকে এলার্জির মাত্রা বের করে এনে থাকেন ক্যামিস্টরা ।
রক্তে এলার্জি থাকলে কি কি খাওয়া যাবে না
প্রত্যেক খাদ্য প্রত্যেক মানুষের জন্যে যদিও এলার্জির উদপাদন করে করে না। তবে বিশেষ করে যে সব খাদ্যে এলার্জি রয়েছে বা রক্তে এলার্জি থাকলে কি কি খাওয়া যাবে না সেসব খাদ্য সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।
চকোলেট এবং কফি
দুগ্ধজাত খাদ্য
সীফুড
সীফুডের মধ্যে এলার্জি রয়েছে যা অনেকের মধ্যে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন চিংড়ি এবং কাঁকড়া।
ডিম
বাদাম
উপরোক্ত সমস্ত খাদ্যগুলি যে, সব মানুষের রক্তের এলার্জি বৃদ্ধি করবে তা কিন্তু নই। একেক জনের একেক রকম খাবারের উপর এলার্জির সমস্যা থাকতে পারে। তবে সেটি ভালো করে একজন চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আপনাকে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন। তার কাছ থেকে পরীক্ষা করার মাধ্যমে কোন কোন খাবারে আপনার এলার্জি রয়েছে তা আপনি ভালো করে জেনে নিলে ভালো ।
কি খেলে রক্তে এলার্জি কমে
- এলার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে আপনি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। যেমন কমলা,মালটা, লেবু, পেঁপে,আমলকি ইত্যাদি। কারণ এইগুলিতে মানব শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন যেমন সবুজ শাক সবজি, পালং শাক, ব্রোকলি এই সব সবজি আপনার শরীরে রক্তের এলার্জি কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।
- মশলা জাঁতীয় খাবারের মধ্যে আদা, রসুন ও হলুদ খুবই ভালো গুন্ সমৃদ্ধ খাদ্য যা আপনার প্রায় খেয়ে থাকি। কারণ এই মশলাগুলিতে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট রয়েছে যা আপনার শরীরে এলার্জি কমাতে খুবই শক্তিশালী।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড : ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি রক্তে এলার্জি কমানোর জন্যে। যেমন ম্যাকরিল, সেমন ও সামুদ্রিক মাছ। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সব সময় প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
রক্তে এলার্জির ভ্যাকসিনের নাম কি
রক্তে এলার্জির ভ্যাকসিনের নাম হচ্ছে অ্যালারজেন ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি । এটি এমন একটি ভ্যাকসিন যা স্বল্প মাত্রা থেকে উচ্চ মাত্রা পর্যন্ত অ্যালারজেন বা ইমুনোথেরাপি এলার্জি আছে এমন ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করা হয় যাতে পরবর্তী রক্তে এলার্জির সংবেদনশীলতা কমে যায় ।
রক্তে এলার্জি কমানোর এলোপাথিক ঔষধ
সেটিজিন - Cetizin
ডাইজিন - Dyzin
রাইজিন - Rizin
এলাট্রল - Alatrol
এলাৰ্গল - Alargol
এসিট্ৰিন - Acitrin
এট্রিজিন - Atrizin
সিটিন - Citin
যদিও আমরা উপরে এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম গুলি বলে দিয়েছি। তারপর ও মনে রাখবেন এই ঔষধ গুলি কেবল মাত্রা একজন রেজিস্ট্রার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না। কারণ প্রত্যেক ঔষধ এক মানুষের জন্যে নই ।
একেক জনের রক্তের এলার্জির পরিমান, রক্তের গ্রূপ এবং উপাদানের উপর ভিত্তি করে ঔষধগুলি দিয়ে থাকেন। তাই সাবধান থেকে ঔষধ গুলি সেবন করবেন ।
রক্তের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
অনেকে এই এলার্জির সমস্যা নিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা। কিন্তু কোন উপায় অন্ত খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু আপনি জানেন কি রক্তের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় রয়েছে অনেক ।
যা হয়ত আমরা জানিনা আমরা আজকে সেই অজানা কথা ব্যক্ত করবো যাতে আপনি খুব সহজে চোখের সামনে যে সমস্ত বিষয় দেখেন কিন্তু সেটা মন থেকে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু রক্তের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আজকে জানলে খুবই গুরুত্ব দেবেন বলে আশা করি।
- আপেল সাইডার ভিনেগার: ঘরে প্রায় আমরা এই জিনিসটি দেখে থাকি কিন্তু এই আপেল সাইডার ভিনেগারে রয়েছে শরীরের পি এইচ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। এক গ্লাস পানিতে দুই চা চমচ পরিমান আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন এতে করে আপনার রক্তের এলার্জির পরিমান সঠিক পরিমান বজায় থাকবে এবং দূর করতে পারবেন।
- হলুদে অসাধারণ গুন্ রয়েছে ঘরোয়া ভাবে রক্তের এলার্জি দূর করার ক্ষেত্রে। কারকিউমিন এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এই হলুদে যা আপনার রক্তের এলার্জির প্রদাহ দূর করে সহজে। প্রতিদিন এক গ্লাসে দুধের সাথে এক চা চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করুন।
- আদা খেতে পারেন কারণ আদাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুন্ রয়েছে তাই প্রতিদিন আদা চা খেতে পারেন।
- গ্রীন টি পান করুন নিত্যদিন কারণ গ্রীন টিতে অনেক এন্টিঅক্সিজেন্ট রয়েছে।
- মধু আপনার শরীরের রক্তের এলার্জির সাথে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- রসুন খেতে পারেন কারণ রসুনে এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুন রয়েছে যা আপনার শরীরের রক্তের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে থাকে ।
শিশুর রক্তের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের কাছে শিশুদের হস্তান্তর থেকে দূরে থাকুন। এর সাথে শিশুদের পরিষ্কার পোশাক পরিধান করতে যেন ভুল না হয় এবং মুখে চুমু খাওয়া থেকে দূরে রাখুন ।
তাছাড়া রয়েছে এলার্জি জাতীয় খাবার বর্জন করা।
ত্বকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
মূলত ত্বকে এলার্জি হওয়ার কারণ গুলি হলো ধুলাবালি এবং পানি বাহিত সমস্যার কারণে। রক্তের এলার্জি থাকলে এটি বেশি দেখা দেয়। ত্বকে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় রয়েছে অনেক। কিন্তু মনে রাখতে হবে সচেতন থাকতে হবে বেশি। ত্বকে এলার্জি দূর করার ক্ষেত্রে এলার্জি আছে এমন মানুষের সংস্পর্শে যাবেন খুবই কম ।
নারিকেল তেল দিয়ে আপনার ত্বকের এলার্জির জায়গায় লাগাতে পারেন অবশ্যই সাথে কর্পূর মিশ্রিত করতে যেন ভুল না হয়। এই উপাদান দিয়ে আপনি প্রতিদিন সুস্হ না হওয়া পর্যন্ত লাগাতে পারেন।
এলোভেরা এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এলোভেরা জেলের চেয়ে ও যদি এলোভেরা নিয়ে নিজে এলোভেরা থেকে রস বের করে পেস্ট হিসেবে লাগাতে পারেন এতে করে এলোভেরাতে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আপনার ত্বকের এলার্জি দূর করতে সহায়তা করবে ।
নিমপাতা একটি খুবই পরিচিত উপাদান ত্বকের এলার্জির জন্যে। নিমপাতা এবং কাঁচা হলুদ একসাথে মিশিয়ে নিয়ে বরির মাধমে খাওয়া যায় যা আপনার জন্যে ঘরোয়া উপায় হিসেবে ত্বকের এলার্জি দূর করতে সহায়ক।
ফিটকিরি আমরা সবাই চিনি এবং জানি। এই ফিটকিরির জল দিয়ে আপনি প্রতিদিন ত্বকের এলার্জির জায়গা ধুয়ে ফেলতে পারেন যা আপনার ত্বকের ময়লা দূর করবে এবং সাথে আপনাকে ত্বকের এলার্জি থাকে মুক্তি দিবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url