গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল এবং ১৯৬৯ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল

গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল


সূচীপত্রঃগণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল । গণঅভ্যুত্থান এই কথাটি এখন বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে ৫ই আগস্ট ২০২৪ সালের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর। তবে গণঅভ্যুত্থানের নাম শুনলে ও গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে জানেনা অনেকে । 

এই কলামে আমরা বলার চেষ্টা করবো গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল, গণঅভ্যুত্থান কি ব্যাখ্যা কর, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ কি এবং কিসের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল এই সব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো । 

গণঅভ্যুত্থান কি ব্যাখ্যা কর


গণঅভ্যুত্থান একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যেখানে সাধারণ জনগণ একত্রিত হয়ে একটি শাসনব্যবস্থা বা জোরপূর্বক ক্ষমতায় বসে থাকা সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এটি সাধারণত অত্যাচার, অন্যায়, অথবা নীতিহীন এক স্বৈরাচারের অসন্তোষজনক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটি গণ-প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয় । 


গণঅভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি হলো জনগণের একত্রিত শক্তি, যারা নিজেদের বাক স্বাধীনতা, অধিকারের জন্যে ও সততা পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রামে নামে। 


তবে একটি গণঅভ্যুত্থান কখনো শান্তিপূর্ণ হতে পারে আবার অশান্তিপূর্ণ ভাঙচুর লুটপাটের মত ও হতে পারে। যেমনটি আমরা ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন বা মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনে দেখেছি। 


এই অভ্যুত্থান সংহিস থেকে অতি সংহিসতার রূপ নিতে পারে। যেমন ফরাসি বিপ্লব। অভ্যুত্থানের মধ্যে থাকে সংগ্রাম, মিটিং, দফায় দফায় মিছিল, হরতাল, অবরোধ, বিদ্রোহ ও বিভিন্ন রকম প্রাণ হানির মত সংঘর্ষ। 


এই অভ্যুত্থানের তখনি সূচনা হয় বিশেষ করে যখন মানুষের অধিকার আদায়ে লক্ষ্যে মানুষ বার বার তার কাঙ্কিত অধিকারে বিফল হয় এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে উদ্যেশ্য ফলপ্রসূ না হয় তখনি এই অভ্যুত্থানের মত বিকল্প পথ মানুষ খুঁজে থাকে । এই অভ্যুত্থান এমনকি সরকার পতন পর্যন্ত ঘটিয়ে থাকে । 


গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল বা হয়


গণঅভ্যুত্থানের সূচনা অনেক কারণে হয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশে ৫২ র ভাষা আন্দোলন ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। মানুষের অধিকার খর্ব করা থেকে শুরু করে নির্মম গণহত্যা পর্যন্ত চলে যায়। 


তার সাথে গুম,খুন বাক স্বাধীনতা হরণ, সংবিধান বহির্ভুত শাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক দুর্নীতি, সরকারি তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাধারণ জনগণের প্রতি অত্যাচার এছাড়াও সাধারণ জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সরকার লাগব না করা এই সব ইত্যাদি কারণে ধীরে ধীরে প্রতিবাদ আন্দোলনে রূপ নিয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। 


আরো অনেক কারণে গণঅভ্যুত্থানের কারণ হতে পারে। যেমন মানুষের সাধারণ জীবন জীবিকা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, কর্মসংস্থানের অভাব হয়ে পড়ে তখন সাধারণ জনগণ স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী অনাস্থায় পরিণত হয় তখন ও গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়ে থাকে। 


অন্যদিকে সরকারি সম্পত্তি হরণ করা, রাজনৈতিক দুর্নীতি যখন বেশি পরিমানে হয়ে যায় তখন মানুষের মনে ধীরে ধীরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এটি আন্দোলন থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থানের কারণ হিসেবে ধরা হয়। 

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল


১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের জন্যে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যদিও সে সময় এই বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নাম পরিচিত ছিল এবং তখনো বাংলাদেশের জন্ম হয় নি। সে সময় আয়ুবখানের শাসন চলছিল। 


অনেকে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কথা শুনলেও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল তার কারণ জানেনা। সেই কথা বলার চেষ্টা করবো সাথে থাকবেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে অভূতপুর্ব একটি রাজনৈতিক ঘটনা। 


এই অভ্যুত্থান হয়েছিল বিশেষ করে এই বাংলাদেশ মানে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে। যা এক সময় গিয়ে সুবিধাবঞ্চিত পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ একটি  বৃহৎ আন্দোলনে জড়ো হয়েছিল এবং যা পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। 


সেই সময় আয়ুব খান শাসন আমলের সময় রাজনৈতিক বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য এত অধিক মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল যে, পূর্ব পাকিস্তানের কাজ থেকে সব সুবিধা বঞ্চিত করে পশ্চিম পাকিস্তানকে রাষ্ট্রের প্রশানিক, সামরিক, এবং রাজনৈতিক সুবিধা গুলি দিয়েছিল ।


গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল


যার দরুন অর্থনৈতিক অসমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এর সাথে পূর্ব পাকিস্তান থেকে উপার্জিত অর্থ পূর্বপাকিস্তানের মধ্যে যতাযত ভাবে বন্ঠন না করায় অর্থনৈতিক বৈষম্য দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যা পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছিল। 


এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি নিয়ে তখন মাঠে নামেন এবং সাধারণ জনগণ কে নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এই ছয় দফা দাবি সত্যিকার অর্থে আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছিলো। 


এর মধ্যে দুইটি দাবি খুবই উদ্ভেগের সৃষ্টি করেছিল তৎকালীন সরকার আয়ুবখানের মনের মধ্যে। সায়ত্বশাসন ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দাবি করা হয়েছিল যা আয়ুবখান সরকারের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের জন্য হুমকিস্বরূপ মনে হয়েছিল। 


এর প্রভাবে তৎকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করে জেল খানায় বন্ধী রেখেছিলেন। যা সাধারণ মানুষের মনে আরো বেশি ক্ষোভের ও সৃষ্টি করেছিল যা এক সময় গিয়ে প্রতিবাদে রূপ নেয় এবং অভ্যুত্থান ঘটে । 


তাছাড়াও আয়ুবখানের সামরিক শাসনের কিছু নীতিমালা তৈরী হয়েছিল যা সাধারণ মানুষের মধ্যে অত্যন্ত অস্বস্তির জন্ম দিয়েছিল। সামরিক শাসনের ফলে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস পায়, রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয় এবং গণতন্ত্র ব্যাহত হয়। এর ফলে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়।


উপরোক্ত এই সব কারণে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান হয় এবং আয়ুবখান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। যা ১৯৬৯ এর পরে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্যে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরী হওয়ার জন্যে মাধ্যম।  

গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ সালের ৫ ই আগস্ট 


উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল এই সম্পর্কে অনেকে আমরা জানি এবং না জানলে আপনি চাইলে আমাদের উপরের আর্টিকেল থেকে জেনে আসতে পারেন । এটি এক ঐতিহাসিক ঘটনা রূপে লিপিবদ্ধ হয়েছে। 


কিন্তু এখন উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সাথে আরো একটি গণঅভ্যুথানের জন্ম হয়েছে সেটি হচ্ছে ২০২৪ সালে ৫ ই আগস্ট । যে গণঅভ্যুত্থান সারা বিশ্বের দরবারে প্রথম। এতোবড় মানুষের সমাগম এবং ছাত্র জনতার এত বিশাল মানুষের সমাগম আর কখনো কেউ দেখেনি। 


বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এই গণঅভ্যুত্থান  একটি স্মৃতি হয়ে থাকবে অনন্তকাল। এই অভ্যুত্থানে ও স্বৈরাচারীতা, দুর্নীতি,গুম , খুন এবং অর্থপাচার এবং পুলিশের অত্যাচার কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বেশি। তাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দলনের ডাক দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ছাত্র জনতা জুলাই মাসে । 


৫ই আগস্ট ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক শেখহাসিনার  পতন হয়েছে। এই অভ্যুত্থানের পিছনে যারা ছিলেন তারা হলো ছাত্র সমন্বয়ক। বাংলাদেশের সাধারণ জনগনের অধিকার হরণ থেকে শুরু করে সৈরাচারিতার জন্যে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হয়। 


এই আন্দোলনে আবু সাঈদ ও মুগ্ধের মত মেধাবী ছাত্ররা নিজেদের বুক পেতে দিয়ে সহজে মৃত্যু বরণ করে নিয়েছিলেন। সাথে আরো অগণিত ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে এবং সাধারণ জনগণকেও হত্যা করেছিল।    

অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ কি


অহিংস শব্দের অর্থ সবাই জানে। অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ মানে হলো যেখানে কোনো হিংসা নেই, নেই কোনো বিশৃঙ্খলা, কোনো জ্বালাও পোড়াও নেই কারো কোনো ক্ষতি নেই শুধু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে আন্দোলন করে তাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করা। 


যেখানে শান্তিপূর্ণ ভাবে জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিবাদ জানায়। তাদের বাক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে ন্যাবিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে তবে কোন সংহিসতার আশ্রয় গ্রহণ না করে। 

অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নিয়ে কিছু ইতিহাস 


যদিও সেই সময় বাংলাদেশ মানচিত্র আকারে আলাদা রূপ পাই নি। তখন এটি ছিল পূর্ব পাকিস্তান। সেই সময় ও অধিকার আদায়ের লড়ায়ে অহিংস গণঅভ্যত্থানের সৃষ্টি হয়েছিল এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে অধিকার আদায় হয়েছিল সেই অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নিয়ে কিছু ইতিহাস তুলে ধরা হলো। 


১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলার মানুষ বাংলা ভাষার জন্যে শিক্ষার্থী সহ আন্দোলনে নেমেছিল এটি অহিংস গণঅভ্যুত্থান রূপে বাংলাদেশের ইতিহাসে লিখিত হয়েছে। 


১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন ছিল অহিংস গণঅভ্যুত্থানের উল্যেখযোগ্য উদাহরণ। 


১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও অহিংস পদ্ধতির মাধ্যমে স্বৈরশাসনের পতন ঘটানো হয়েছিল।

কিসের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল


গণঅভ্যুত্থান অনেক কারণে হয়। কিছু সুবিধা জনগনের কাজ থেকে যখন জোর পূর্বক কেড়ে নেওয়া হয় তাছাড়াও শাসন ব্যবস্থার মধ্যে সৈরাচারিতা এসে যায়, মানুষের অধিকার হরণ করা হয়, ন্যায়বিচার লংঘিত হয় এবং মানুষের জনজীবন দুর্ভোগে পড়ে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগামীর কারণে তখন গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়। 


অতীতে অনেক কারণে বিশ্বে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল তার মধ্যে হলো ভাষা আন্দোলনের জন্যে, সৈরাচারিতা এবং শাসকদের দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে জনগণ সংঘবদ্ধ হয়ে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করে । 

গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল নিয়ে লেখকের শেষ কথা


এই আর্টিকেলে গণঅভ্যুত্থান কেন হয়, কেন হয়েছিল, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল , বিশ্বে কেন গণঅভ্যুত্থান হয় এবং কিসের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল সেই কথা আমরা সবিস্তারে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তেমন কিছু আর জানার নেই। এই পোষ্টে আমাদের ধারণা অনেক কিছু জানতে পারবেন তাই ভালো থাকবেন। সত্যের সাথে লড়াই করার মানসিকতা তৈরী করুন । 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪