OrdinaryITPostAd

জন্মান্তরবাদ কাকে বলে ? আসলে জন্মান্তরবাদ কি সত্য ?

জন্মান্তরবাদ কাকে বলে ? আসলে জন্মান্তরবাদ কি সত্য ?

বহু মানুষের মধ্যে এই গভীর প্রশ্ন বহু বছর ধরে রয়ে গেছে নীরবে। বর্তমানে যুগের পরিবর্তনের কারণে প্রযুক্তির সুবিদার কারনে অনলাইনে অনেক মানুষ জানতে চাই এবং জানার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন জন্মান্তরবাদ কাকে বলে ।

সূচীপত্রতাই আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে থাকছে জন্মান্তরবাদ কাকে বলে এবং সাথে থাকছে জন্মান্তরবাদ কি, কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ, জন্মান্তরবাদ কি সত্য,  বেদে জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে কি বলেছেন। সেই সম্পর্কে আলোচন করার চেষ্টা করবো ।

জন্মান্তরবাদ কি

জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে মানুষের দীর্ঘদিনের জানার আগ্রহ। কারণ এই জন্মান্তরবাদের উপর অনেক বিতর্ক রয়েছে। এই বিতর্কের ফাঁদে যেন মানুষ না পড়ে সেই ক্ষেত্রে চেষ্টা করবো যথেষ্ট যুক্তি দিয়ে বুজিয়ে দেওয়ার জন্যে ।


প্রথমে বলি জন্মান্তরবাদ কাকে বলে। সহজে বলতে হয়, জন্মান্তরবাদ মানে হলো মানুষের একবার মৃত্যুর পর আবার মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করে কিনা। অর্থাৎ একই আত্মা তার স্তুল দেহ ছেড়ে যাওয়ার পর ওই আত্মা কি আবার আরেকটি নতুন দেহ প্রাপ্ত হয়। এই জটিলতাকে জন্মান্তরবাদ বলে ।


এই বিভ্রান্তিতে রয়েছি বলেই আমরা একেই জন্মান্তর বাদ বলি। যারা বিশ্বাস করে তারা তাকে জন্মান্তর বলে। জন্মান্তর হল মানুষের কর্মফলের দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব প্রকৃতি।

যেই বিশ্বাসের মধ্যে অনেকেরই এখনো দ্বিধা আছে। যেমন ইসলাম ধর্মে জন্মান্তরবাদ বিশ্বাস করেনা। আবার বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করে এই জন্মান্তরবাদ কে। সনাতন ধর্মেও বিশ্বাস করে। কিন্তু খ্রিষ্টান ধর্মে এই নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে । 

জন্মান্তরবাদ কি সত্য

জন্মান্তরবাদ সত্য কি মিথ্যা সেটা সম্পূর্ণ আপনার বিশ্বাসের উপর নির্ভর করবে। কারণ একটি একটি ধারণা। একশ্রেণীর মানুষের মধ্যকার ধারণা যে সবার সাথে মিলবে তার কোন ভিত্তি নেই। একেক মানুষের বিশ্বাস একেক রকম। একেক জন একেকরকম বিশ্বাসের মাধ্যেম নিজের মনে জায়গা করে নেই সত্য কে ।

জন্মান্তরবাদ কাকে বলে ? আসলে জন্মান্তরবাদ কি সত্য ?

ঠিক জন্মান্তরবাদ কি সত্য এই বাক্যটিও আপনার বিশ্বাসের উপর নির্ভর করবে। তবে সনাতন ধর্মে যে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে জন্মান্তরবাদকে  প্রাধান্য দিয়েছে তা নিয়ে একটু বলার চেষ্টা করবো ।

একজন মানুষ তার জীবনের সবকিছু নির্ধারণ করবে তার কর্মের উপর। যাকে সনাতন ধর্মে কর্মফল বলে। আপনার চেতনা বা চিন্তা যেমন, বা কর্মফলের উপর ভিত্তি করে। আপনার সেই চেতনা বা চিন্তা অনুযায়ী আপনার মৃত্যু হয়েছিল সেই বা মৃত্যুর সময় আপনি যে চিন্তা নিয়ে মৃত্যু বরন করেছিলেন, সেইভাবে চিন্তা বা ভাবের উপর ভিত্তি করে আরেকটি মানব জন্ম লাভ করবেন ।
সেই অনুযায়ী সনাতন ধর্মের শ্রীমদ্ভভগবৎ গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন

যং যং বাপি স্মরণভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরম
তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিতা ।
( শ্রীগীতা অধ্যায় নং ৪ এবং শ্লোক নং ৬ )
অর্থঃ 
মৃত্যুর সময় মানুষ যা চিন্তা করে বা যাহা ভাবিতে ভাবিতে দেহত্যাগ করে। 
         সে সেইভাবে নিবিষ্ঠ থাকায় পুনরায় সেই চিন্তা সমৃদ্ধ দেহ প্রাপ্ত হয়।
 
যদিও এইটা সনাতন ধর্মের মানুষের মধ্যে সত্য বলে ধরে নেয় বা বিশ্বাস করে। হয়ত সেইটা অন্য ধর্মের লোকেরা বিশ্বাস করে না। তবে বৈজ্ঞানিক ভাবে এর কোন ভিত্তি নেই বা কোন যুক্তিক প্রমান নেই । কিন্তু বিতর্ক রয়েছে ।  

সনাতন ধর্ম মতে জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে কিছু যুক্তিক প্রশ্ন

জন্মের পর কেন সবাই একই ভাবে রাজার ঘরে জন্ম নেই না? 
নব জন্মের পর শিশু কেন দুঃখ দারিদ্রের মধ্যে বড় হয়? 
সেই শিশুও হয়ত ধনীর দুলাল কিংবা দুলালী হয়ে বড় হতে পারত কিন্তু কেন হয় না ?

কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ মধ্যে কি সম্পর্ক আছে

বিশেষ করে যারা জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে বিশ্বাস করে তারা কর্মবাদ সম্পর্কে বিশ্বাস করবে। কারণ কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদের মধ্যে অবশ্যই একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে কর্মবাদ সম্পর্কে আমরা আগে একটু আলোচনা করে আসি ।

 

কর্মবাদ মানে কি ?

কর্মবাদ মানে হলো মানুষের সমস্ত কর্মের একটি নির্ধারিত ফল। শুভ-অশুভ, পাপ-পূণ্য এই সব কর্মের ফল। কারণ সনাতন ধর্ম মনে করে কর্মবাদ মানে হলো প্রত্যেক মানুষের কর্ম কখনো নষ্ট হয় না। তার সমস্ত ভাল-মন্দ কৃতকর্মের জন্যে তাকে একটি ভাল বা খারাপ ফল ভুগ করতে হবে। 

সেটি শারীরিক বা মানসিক যায় হোক। এটিই হলো কর্মবাদ। আর কর্ম মানুষের জীবনে অদৃশ্য রূপে কাজ করে। কিন্তু অবশ্যই প্রত্যেক কাজের জন্যে একটি কর্মফল আপনাকে ভোগ করতে হবে।
 
এই জন্মান্তরবাদ যেহেতু পরজন্মেরই কথা সেহেতু কর্মের উপর নির্ভর করেই তার পরের জন্ম নির্ধারণ হয় বা সেই রূপ কর্মের ফল স্বরূপ দেহ পেয়ে থাকে। এখানে আত্মা কিন্তু অবিনশ্বর বা নষ্ট হয় না।
 
তাই সেই আত্মাই তার জন্মের পর কর্ম অনুযায়ী আরেকটি নতুন দেহ ধারণ করেন বা তাকে পূর্বসংস্কার ফলে জন্মলাভ বলেও থাকে। কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদ এই দুটি হলো পূর্বসংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানের একটি অবস্থার প্রাপ্ত হওয়া।
 
জন্মান্তরবাদীর ধারণা যে জীবনের নানা অভিজ্ঞতা কর্মবাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে  থাকে। যার ফলে মানুষ তার পূর্বজন্মের অনেক কিছু তার সংস্কার বসে বা কর্মবাদ হিসেবে নিয়ে আসে। 

বেদে জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে শ্লোক

সনাতন ধর্মে জন্মান্তরবাদ বিশ্বাস করে এবং এর কারণে জন্মান্তরবাদ সম্পর্কে বেদে বহুবার উল্লেখ করেছেন এবং আমরা প্রামান পায়। সনাতন ধর্মের যেহেতু আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ সেহেতু সনাতন ধর্মের গ্রন্থগুলির মধ্যে বেদের কথা গুলি একেক ঋষিরা একই জন্মান্তরবাদের কথা একেক ভাবে লিপিবদ্ব করেছেন । বেদে জন্মান্তরবাদ নিয়ে অনেক শ্লোক বলা হয়েছে বা ঋষিরা দেখেছেন হৃদয় আকাশে ।
 
নিছে কিছু শ্লোক নাম্বার এবং বেদের নাম দেওয়া হয়েছে যেখানে জন্মান্তরবাদের কথা পুনরবার উল্লেখ করছেন । 

ঋগবেদে - ১/২৪/২ শ্লোকে জন্মান্তরবাদ নিয়ে ব্যাখ্যা 

আমরা জ্ঞানস্বরূপ বিনাশধর্ম রহিত পদার্থের মধ্যে অদ্বিতীয় স্বরূপ সব জগতের প্রকাশকারী পরমেশ্বরের স্মরন করি। তিনি আমাদের মহৎ গুনের ধারক পৃথিবীর মধ্যে পুনরায় জন্ম দান করেন যাতে আমরা পিতা এব মাতাকে (চ) এবং অনান্য জনকে দর্শন করতে পারি।

ঋগবেদে -  ১০/৫৯/৬ নং  শ্লোকে জন্মান্তরবাদ নিয়ে ব্যাখ্যা 

হে প্রাণবিদ্যাবিদ আমাদের এই শরীরে পুনরায় (পূনর্জন্মে ) নেত্র পুনরায় প্রাঙ্কে আমাদের ভোগ্যবস্তু গ্রহনের শক্তি প্রদান করুন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত উপরে আকাশ মধ্যে সূর্যকে দেখতে থাকি এহ অনুমতি প্রদানকারী আমাদের সুখ দ্বারা সূখী করুন ।

ঋগবেদে - ১০/৫৯/৭ নং  শ্লোকে জন্মান্তরবাদ নিয়ে ব্যাখ্যা 

সুখদাত্রী ভুমি আমাদের পুনরায় ((পূনর্জন্মে  ) প্রানশক্তি প্রদান করেন দ্যুলোক পুনরায় (প্রানশক্তি প্রদান করেন ) অন্তরিক্ষ পুনরায় (প্রানশক্তি প্রদান করেন ) পরমেশ্বর আমাদের পুনরায় শরীর প্রদান করেন সবার পোষক প্রভু পুনরায় আমাদের সতপথ প্রদান করেন যা কল্যানদায়ক। ঋগবেদ ।

যজুর্বেদে – ১২/৩৮ নং  শ্লোকে জন্মান্তরবাদ নিয়ে ব্যাখ্যা  

হে প্রকাশমান জীব শরীর দাহের পর পৃথীবি এবং জলের মধ্যে দেহ ধারনের কারন কে প্রাপ্ত হও এবং মাতার গর্ভে (পিতা দ্বারা ) সংযুক্ত হয়ে পুনরায় এই লোকে ফিরে আসো । 

অথর্ববেদে - ৬/৬৭/১ নং  শ্লোকে জন্মান্তরবাদ নিয়ে ব্যাখ্যা

পরম ঐশ্বর্য আমার পুনরায় আত্মবল ধন এবং বেদ বিজ্ঞান পুন্রায় প্রাপ্ত হোক বলার মধ্যে চতুর বিদ্বান লোক যাথাস্থানে এই লোকেই পুনরায় সামর্থ করো । 

ঋগবেদ -১০/১৬/৩  নং  শ্লোকে জন্মান্তরবাদ নিয়ে ব্যাখ্যা

হে মনুশ্য মরনন্তর তোমার নেত্র সূর্যকে প্রাপ্ত হয় আত্মা প্রানবায়ুকে প্রাপ্ত হয় কৃত কর্ম অনুসারে আত্মা দুল্যো এবং পৃথীবি লোকেও যায়। যদি সেই লোক কে প্রাপ্তির মাধ্যমে তোমার আত্মার কর্ম হিতকর হয় তখন শরীর ধারন করে অথবা জলে ও যায় এবং ঔশধি বৃক্ষ আদির মধ্যে অ স্থিতি লাভ করে । 

যজুর্বেদে- ১৯/৪৭ নং  শ্লোকে জন্মান্তরবাদ নিয়ে ব্যাখ্যা

আমি মানুষের জন্য দুই মার্গ শ্রবন করেছে এক পিতৃযান এবং দ্বিতীয় দেবযান যা পিতা ও মাতার সংসর্গ দ্বারা উৎপন্ন এই সমস্ত চর, জীবিত সংসার এই দুই মার্গ দ্বারাই সুখপূর্বক প্রয়াণ করে। 

*** এখানে পুনরায় মানে "পূনর্জন্মের" কথা বলা হয়েছে ।

জন্মান্তরবাদ নিয়ে ছোট্ট একটি উদাহরন

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ইয়ান স্টিভেনসন এই জন্মান্তরবাদ নিয়ে অনেক গবেষনা করে দেখেছেন এবং প্রায় তিন হাজারের ও উপরে অনেক ক্যাস হিস্ট্রি নিয়ে প্রমান করেছিলেন যে অনেকে তাদের পুনর্জন্মের কথা বলতে পারেন এবং এদের কথার সাথে সম্পুর্ন মিল রয়েছে । তাই বলা যায় জন্মান্তরবাদ মুলত একটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত ।

জন্মান্ত্ররবাদ কাকে বলে এই নিয়ে লেখকের শেষ মন্তব্য 

জন্মান্তরবাদ প্রমানিত বৈজ্ঞানিকভাবে যেহেতু বহুল প্রচারিত নই বলে অনেকে ভুল ব্যখার জন্যে জন্মান্তরবাদ সম্পরকে জানেনা । তবে জন্মান্তরবাদ কাকে বলে এই নিয়ে আমরা ও কিছু যুক্তি উত্তাপন করছি । তবে জন্মান্তরবাদ নিয়ে এখনো গবেষনা চলছে । আশা করি শিগ্রই সবার ভুল ভাঙ্গবে বলে বিশ্বাস রয়েছে ।

প্রায়  জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)


জীবদেহে অবস্থিত আত্মাকে কি বলা হয় ?

জীবদেহে অবস্থিত আত্মাকে বলে জীবাত্মা এবং সেটি পরমাত্মার অজ্ঞানের অংশ।

ইসলাম ধর্মে যাকে রুহ বলে সম্বোধন করে । 


জন্মান্তরবাদ কারা স্বীকার করে ?
জন্মান্তরবাদ সনাতন ধর্মে এবং বুদ্ধ ধর্মের অনুসারিরা বিশ্বাস করে এবং স্বীকার করে


জন্মান্তরবাদের সঙ্গে কি পশু পাখী বা অন্যান্য প্রানীদের সম্পর্ক রয়েছে ?

হ্যা অবশ্যই রয়েছে । প্রান যেহেতু একটি দেহের মধ্যে অবস্থিত যাকে আমরা আত্মা বলি এবং সেই দেহ যেহেতু নশ্বর সেহেতু পশু পাখী বা অন্যান্য প্রানীদের মধ্যকার একটি জন্মান্তরবাদের সম্পর্ক রয়েছে এবং তাদের ও জন্ম মৃত্যু হয় । 


জন্মান্তরবাদ ও কর্মবাদের মধ্যে কি আদৌ কোন সম্পর্ক বিরাজমান ?
হ্যা অবশ্যই বিরাজমান । প্রত্যেক জন্মান্তরবাদ বিশ্বাসীরা মনে করেন প্রত্যেক কর্মের একটি ফল রয়েছে সেহেতু শুভ কর্মের ফলে মানুষ উন্নত চেতনার মানুষ হয়ে জন্মলাভ করে এবং বিপরীতে অনুন্নত চেতনার মানুষ হয়ে জন্মালাভ করে । এইসব কর্মবাদের মাধ্যমে হয় ।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪