আক্কেল দাঁতে ইনফেকশন এবং আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়
সূচীপত্রঃআক্কেল দাঁতে ইনফেকশন । দাঁত মানুষের শরীরের অন্যতম একটি অংশ এবং প্রয়োজনীয় আহার করার হাতিয়ার। কিন্তু এই দাঁতের সমস্যায় ভুগেনায় তেমন মানুষের সমস্যা খুঁজে পাওয়া বড়ই মুশকিল। সেহেতু আক্কেল দাঁতে ইনফেকশন এর সমস্যায় প্রায় মানুষ ভুগেছি। তাই আজকে আমরা আক্কেল দাঁত সম্পর্কে বলার চেষ্টা করবো ।
সাথে আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে, আক্কেল দাঁত কেন হয়, আক্কেল দাঁত এর কাজ কি, আক্কেল দাঁত ওঠার বয়স, আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ওষুধ ও আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয় এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আমরা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো সাথেই থাকুন ।
আক্কেল দাঁত আসলে কি ?
আসলে এই আক্কেল দাঁতের মেডিকেল ভাষায় নাম হচ্ছে পেরিকরোনাইটস । অর্থাৎ আক্কেল দাঁতের উঠার সময় মাড়িতে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয় তাকে বলে পেরিকরোনাইটস । এটি একটি আক্কেল দাঁতে ইনফেকশন এই পেরিকরোনাইটিস কিভাবে সৃষ্টি হয় ?
আক্কেল দাঁতের আগমন হওয়ার সময় মাড়ির মাংসের উপরে খুব চাপ প্রয়োগের ফলে মাড়ির আশপাশের টিস্যুতে চাপ পড়ে এর ফলে খুব ব্যথা অনুভব হয় এবং কোন কোন সময় প্রদাহের সৃষ্টি হয় । একেই বলে পেরিকরোনাইটিস ।
ভারতীয় এক দন্ত বিশেষজ্ঞ বলেন, পেরি মানে হল চারপাশ, করোনা মানে হল দাঁতের ক্রাউন আর আইটিস মানে হল হল প্রদাহ ।
আক্কেল দাঁত কেন হয়
আক্কেল দাঁত হলো দাঁতের চোয়ালের শেষের দিকে উঠে থাকে । চোয়ালের উপরে ও নিচে শেষের দাঁত গুলিকে আক্কেল দাঁত বলে থাকে । এই গুলি স্বাভাবিকভাবে অন্য দাঁতগুলি থেকে বড় হয় ।
যাদের দাঁতের চোয়াল বড় তাদের মধ্যে এই আক্কেল দাঁত উঠলে কেউ জানেনা বা বুজতে পারেই না । কারণ তাদের চোয়ালে দাঁত উঠার জন্যে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে ।
যাদের মুখের চোয়াল ছোট তাদের দাঁত উঠার জন্যে জায়গা না থাকায় আক্কেল দাঁত উঠার সময় টিস্যুগুলিতে আঘাত হয় এবং প্রদাহের সৃষ্টি হয় । তখন মানুষের অনুভব হয় যে এটি আক্কেল দাঁত ।
আসলে আক্কেল দাঁত হচ্ছে বয়সের উপর ভিত্তি করে উঠে থাকে । এটি আসলে আমাদের নির্দিষ্ট দাঁত । মানে যে ৩২ টি দাঁত থাকার কথা সেই দাঁতের মধ্যেই এই আক্কেল দাঁত গণনায় পড়ে । তৃতীয় মোলারের দাঁত ও বলে থাকে ।
এখন কথা হলো চোয়ালে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে যখন প্রদাহের সৃষ্টি হয় তখন তাকে আক্কেল দাঁতের আগমন বলে আমরা বলে থাকি। এবং এই কারণে আক্কেল হয় ।
আরও পড়তে পারেনঃ ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয়
দাঁতের কাজ হলো খাবার ভাল করে পরিপাকের জন্যে চিবানোর মাধ্যমে সহায়তা করা। কিন্তু কথা হলো এতো সব দাঁতের মধ্যে আক্কেল দাঁত নিয়ে কেন বার বার কথা হচ্ছে । আসলে আক্কেল দাঁত এর কাজ কি?
মানুষের দাঁতের শেষের সারির দাঁত হচ্ছে এই আক্কেল দাঁত। এই দাঁত গুলি প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বয়স ভেদে উঠে থাকে। এর কাজ হচ্ছে শক্ত খাওয়ার ভাল করে চিবানোর জন্যে সহয়তা করা ।
আমাদের পূর্বপুরুষরা অর্থাৎ মানুষ যখন আদিম যুগে শক্ত খাওয়ার খেত রান্না করা ছাড়া। মানে কাঁচা মাংস খেত তাদের তখন খাওয়ার অভ্যাসের কারণে তাদের চোয়াল ও বড় ছিল দাঁতউঠার সময় তেমন কোন বেদনা ছিলোনা ।
কিন্তু যুগের পরিবর্তনের কারনে মানুষের মধ্যে যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমন করে শারীরিক গঠনের মধ্যে ও পরিবর্তন এসেছে। এখন আর আমাদের শক্ত মাংস খেতে হয় না ।
রান্না করে নরম এবং মসলা জাতীয় খাবার খাচ্ছি যা আমাদের দাঁতের উপর তেমন প্রেশার ও পড়ছেনা। তাই আমাদের এই নরম খাওয়ার রান্না করা মাংস খেতে যখন অভ্যস্ত হয়েছি তেমন করে আমাদের চোয়াল ও ছোট হয়েছে ।
আক্কেল দাঁত উঠতে পর্যাপ্ত জায়গা না পাওয়ার কারণে ব্যথার সৃষ্টি হচ্চে। কিন্তু আক্কেল দাঁতের কাজ হলো শক্ত খাওয়ার কে চিবিয়ে খাওয়ার জন্যে সহায়তা করা ।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে
আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন পর্যন্ত থাকে এই কথা বলতে হলে একটু পিছনে ফিরে যেতে হবে। আক্কেল দাঁত উঠে হচ্ছে বয়সের উপর নির্ভর করে। মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি বৃদ্বির ক্ষেত্রে এটি একটি নিদর্শন ।
বিষয়টা আরেকটু খুলে বলতে হলে বলতে হয়। মানুষের যখন কোন ভারী খাবার চিবিয়ে খাওয়ার সময় হয় বয়স অনুযায়ী তখন শক্ত খাবার চিবিয়ে খাওয়ার জন্যে সহায়তা করতে এই আক্কেল দাঁত উঠে থাকে ।
এটি একটি হিউম্যানিটি সিস্টেম। এই আক্কেল দাঁত উঠার সময় মুখের চোয়ালে যদি পর্যাপ্ত পরিমান জায়গা থাকে তাহলে এই ব্যথা থাকে ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত ব্যথা থাকে ।
আর অনেকের মুখের চোয়াল ছোট হওয়ার কারণে আক্কেল দাঁত গজাতে বা উঠতে মাড়িতে প্রচন্ড চাপ পড়ে এবং ব্যথা কয়েকদিন অবস্থান করে সেটি ৭ দিন পর্যন্ত হতে পারে ।
তবে এইক্ষেত্রে পরামর্শ দেওয়া যায় যে, যখন আক্কেল দাঁত মুখের মধ্যে উঠে বা ব্যথা অনুভব হয় তখন একজন দন্ত বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। তিনি মুখের পরিস্থিতি দেখে এবং বুজে আপনাকে কিছু মেডিসিন সাজেশন করতে পারে ।
আক্কেল দাঁত ওঠার বয়স
আমাদের মধ্যে ঝগড়া করার সময় একটি কথা মুখে মুখে বলে থাকে যে, এক থাপ্পড় দিয়ে তুমার ৩২ টা দাঁত ফেলে দেব । আসলে আমাদের মধ্যে ৩২ টি দাঁত সবার মধ্যে উঠে না ।
কারণ কিছু দাঁত বয়স ভেদে এবং মুখের চোয়ালের অবস্থান বুজে উঠে থাকে। আক্কেল দাঁত উঠার বয়স হচ্ছে বিশেষ করে ২৫ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে অনেকের মধ্যে ১৭ থেকে ২৪ বছরের ভিতর উঠে যায় ।
আবার অনেকের মধ্যে এই আক্কেল দাঁত উঠেও না। আসলে উঠে না বললে ভুল হবে। সবার মধ্যে এই আক্কেল দাঁত উঠে। কিন্তু উঠে না বলে মনে হয় হলো, যাদের মুখের চোয়াল বড় তাদের এই আক্কেল দাঁত উঠতে পর্যাপ্ত জায়গা পাই ।
যেহেতু পর্যাপ্ত জায়গা পাই সেহেতু ব্যথা লাগে না মাড়ির টিস্যুতে আঘাত হয় না। এর কারণে তারা বুজে উঠতে পারে না যে তাদের আক্কেল দাঁত উঠেছে। আশা করি বুজে গেছেন আক্কেল দাঁত উঠার বয়স কখন ।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ওষুধ
আক্কেল দাঁত ব্যথা অনেকের ক্ষেত্রে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তখন ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে ওষুধের জন্যে হন্য হয়ে পড়ি। তবে ব্যথার ঔষধ বেশি খাওয়ায় কিডনীর সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
সেক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ওষুধ হিসেবে ঘরোয়া কিছু পদ্বতি রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে জেনে আসি। এলোপ্যাথিক ওষুধের মধ্যে নিশ্চয় কিছু প্বার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তার চেয়ে এই ঘরোয়া পদ্বতিগুলি আপনাকে অধিক সহায়তা করবে বলে মনে করি ।
লবঙ্গঃ আক্কেল দাঁতের ব্যথার ওষুধ হিসাবে লবঙ্গের ব্যবহার খুবই পরিচিত একটা ঘোরোয়া উপাদান । যে জায়গায় আক্কেল দাঁতের ব্যথা হয়েছে সেখানে আপনি চাইলে একটা লবঙ্গ চিবাতে পারেন। এতে করে লবঙ্গের রস ব্যাকটেরিয়া মারতে সহায়তা করবে। এবং ব্যথা অনেকটা উপশম হবে ।
গরম ও ঠান্ডা শেঁকঃ খানিক পর পর গরম সেঁক এবং ঠান্ডা সেঁক খুবই উপকারী। মুখের বাইরে থেকে একটি তোয়ালে করে বরফের টুকরো নিয়ে ঠান্ডা সেঁক দিন এতে করে আপনার ব্যথা কমবে খুব তাড়াতাড়ি ।
আবার তোয়ালের মধ্যে গরম লাগিয়ে বাইর থেকে সেঁক দিন এতে করে রক্ত চলাচল বাড়বে। এই পদ্বতি আপনি দিনে ৪ বার অথবা ৫ বার দিন তাহলে আপনার ব্যথা অনেকাংশে কমে যাবে দ্রুত ।
লবন জলঃ লবন জল অতিব উপকারি উপাদান হাতের নাগেলে থাকে। এই লবন জল অতিরিক্ত নই, হালকা গরম জলে দিয়ে ভাল করে কুলকুচি করুন এতে করে আপনার সংক্রমিত ব্যাক্টেরিয়ার মৃত্যু ঘটবে এবং ব্যথা উপশম হবে দ্রুত ।
পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। খুবই উপকারী একটি উপাদান । এই পুদিনা পাতার মধ্যে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। যা ব্যথা দূর করতে খুবই সহয়তা করে। এই পুদিনা পাতার রস তুলার সাথে লাগিয়ে ব্যথার স্থানে লাগান এতে করে উপকার পাবেন ।
আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়
আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয় সেই প্রশ্ন তখনি আসে যখন মানুষ এই আক্কেল দাঁতের কারণে প্রচন্ড ব্যথার সম্মুখীন হয় । এটি ও আক্কেল দাঁতের ইনফেকশন ।
কিন্তু ডাক্তারেরা বলে থাকে যদি আপনার মুখের সুস্থ দাঁতের উপর পরবর্তী কোন দাঁত উঠার সময় আঘাত হানে তাহলে দাঁত সুস্থ রাখতে আপনাকে অসুস্থ দাঁত ফেলে দেওয়াটা জরুরি ।
যদিও আমাদের মধ্যে আক্কেল দাঁত এই রকম কোন সমস্যার সৃষ্টি করে তখন তুলে ফেললে কি সমস্যা হতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু সমস্যার কথা ।
ফুলে যাওয়া সাথে ব্যথাঃ আক্কেল দাঁত তুললে মুখের ভিতরে যখন অস্ত্র পাচার করবেন তখন পরবর্তি আপনার মুখের ভিতর মাড়ি ফুলে যায় এবং ব্যথার সৃষ্টি করবে। দাঁত তুলার সময় বিশেষ করে ডাক্তারের ওই জায়গাটা অবস করে তারপর দাঁত তুলার কাজটি করে থাকেন ।
অস্ত্র পাচার করার সময় ব্যথার অনুভব কম হয়। কিন্তু যখন কাজ শেষ হয়ে যায় তখন আবার ঘন্টা খানেক পর খুব ব্যথা এবং সাথে ফুলা ভাব দেখা দেয় কয়েকদিনের জন্যে ।
সংক্রমনের সম্ভবনাঃ অস্ত্র পাচারের জায়গায় সংক্রমের সম্ভবনা থাকে অনেকটা। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে সেটা আর থাকে না ।
ব্লিডিংঃ দাঁত তুলার জায়গায় একটু প্রেশার পড়লেই ব্লিডিং হওয়ার সম্ভবনা থাকে । যে টিস্যুগুলি ক্ষতি হয়েছে সেগুলি উপশম না হওয়া পর্যন্ত একটু ব্লিডিং হতে পারে ।
মুখ খুলতে অসুবিদাঃ অনেকের মধ্যে এই আক্কেল দাঁত তুলার পর মুখ খুলতে অসুবিদা হয় সাময়িক ভাবে ।
তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে আপনার এই সমস্যা বেশি দিন থাকবেনা। সেই ক্ষেত্রে দুষ্চিন্তা করার কিছু নেই।
আক্কেল দাঁতে ইনফেকশন সম্পর্কে শেষ মন্তব্য
আশা করি তেমন প্রশ্ন আর জানার নেই কারণ সেই রকম জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহ আক্কেল দাঁত নিয়ে আমরা জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনি এক আর্টিকেলে থেকে বহুমুখী সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন ।
আপনার জন্যেঃ দাঁতের রুট ক্যানেল করতে কত টাকা খরচ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url