কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম | প্রতিদিন আমলকি খেলে কি হয়?

কাঁচা আমলকি খেলে কি হয়


সূচীপত্রঃকাঁচা আমলকি খেলে কি হয়। আমলকি ভিটামিন C সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল বলে ধরে নেওয়া যায়। আমলকির অসাধারন গুনের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তাই আজকের এই নিবন্ধে আমরা আমলকির সমস্ত কথা আলোচনা করার চেষ্টা করবো। 


কাঁচা আমলকি খেলে কি হয় এই কথার উপর আমরা আরো অনেক কিছু বলার চেষ্টা করবো বিশেষ করে আমলকির আদ্যপান্ত যেমন, প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত, খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ।


এরপর রয়েছে কাঁচা আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা, আমলকির ক্ষতিকর দিক, আমলকি কখন খাওয়া উচিত এবং সর্বশেষ আমলকির গুণাগুণ ও উপকারিতা নিয়ে। তাই আশা করি ভালো কিছু জানতে পারবেন। সাথেই থাকুন, বিফল হবেন না। 

কাঁচা আমলকি খেলে কী হয়


সেই ছোট্ট জীবন থেকে আমলকি আমরা সবাই চিনি কিন্তু এর গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের অনেকের জানা নেই। যদিও আমলকি খুবই ছোট্ট একটি ফল, তথাপি এর গুনাগুন অগণিত যা মুখে বলে শেষ করে যাবে না যে, কাঁচা আমলকি খেলে কি হয় । 


কারণ কাঁচা আমলকির ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে নতুন জীবন জাগিয়ে তুলার ক্ষমতা। এতে রয়েছে ভিটামিন C। যা মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মূল মন্ত্র। যেমন কাশি, সর্দি এবং ভাইরাস জনিত ইনফেশনের কারণ কে দূর করে।  


এছাড়া ও কাঁচা আমলকিতে লুকিয়ে রয়েছে সৌন্দর্য বর্ধনের গোপন কথা, কারণ কাঁচা আমলকি আপনার ত্বককে সুন্দর করে তুলে দিনে দিনে এবং সাথে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।


 দেহের ক্লান্তি দূর করার জন্যে কাঁচা আমলকি খুবই দায়িত্ব পালন করে। তাই মানুষের মধ্যে চমতকার সতেজ অনুভূতি দেয় এই কাঁচা আমলকি ।


ডায়বেটিস রোগীর জন্যে কাঁচা আমলকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এই কাঁচা আমলকি রক্তে সুগারের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে খুবই অপরিহার্য।  তবে মনে রাখতে হবে দিনে ১ থেকে ২ টি আমলকি খেলেই আপনার শরীরের অপূর্ণ সুখ অনুভব করতে পারবেন তাই, কাঁচা আমলকি সত্যিই এক অমূল্য উপহার। 

প্রতিদিন কাঁচা আমলকি খেলে কী হয়


অনেকের মনে দীর্ঘদিনের প্রশ্ন থাকতে পারে যে, কাঁচা আমলকি খেলে কি হয় ?  শরীরের পরিবর্তন আনার চেষ্টা থাকলে প্রতিদিন কাঁচা আমলকি সেবন করতে পারেন। কারণ প্রতিদিন কাঁচা আমলকি খাওয়া শুরু করলে এমন এক শরীরের উন্নতি সাধন হয় যা কল্পনা করতে পারবেন না। 


যেমন আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে খুবই শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে এবং সাথে শরীরের ভিটামিন C এর ঘাটতি অনায়াসে পূরণ করবে। আপনার শরীরের প্রায় সময় যে সর্দি, কাশি এবং জ্বর হয়ে থাকে তা থেকে মুক্তি পাবেন অনায়াসে।   


শুধু রোগ পরিরোধ ক্ষমতা ছাড়াও হজমশক্তি বর্ধনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই কাঁচা আমলকি। কারণ এটি আপনার পাকস্থলীর খাবারকে সহজে হজম করে এবং গ্যাসের সমস্যা ও এসিডিটি দূর করে অনেকাংশে। 


কাঁচা আমলোকিতে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অভ্যন্তরে টক্সিন দূর করে থাকে। যার ফলপ্রসূতে ব্রণ দূর হয় এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে সাথে চেহারার উজ্জলতাকে ফিরিয়ে আনে। তাছাড়াও হৃদরোগে ঝুঁকি কমিয়ে আনে ও ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে কাঁচা আমলকি।  


সব মিলিয়ে প্রতিদিন আমলকি খাওয়া শরীরের জন্য এক আশীর্বাদ বললেও কম বলা হয়। তবে মনে রাখতে হবে, পরিমিত পরিমাণেই খেতে হবে, যাতে অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়।


প্রতিদিন কয়টা কাঁচা আমলকি খাওয়া উচিত


শরীরের চাহিদা এবং সহ্য শক্তির উপর নির্ভর করে যে, কয়টা কাঁচা আমলকি আপনার খাওয়া উচিত। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন অন্তত এক বা দুটি কাঁচা আমলকি খাওয়া খুবই উপকারী এবং সাথে নিরাপদ। 


কারণ কাঁচা আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন C । যা একজন মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষতমতাকে বৃদ্ধি করে। তবে ছোটরা প্রতিদিন অর্ধেক অথবা একটি পর্যন্ত আমলকি খেতে পারে। 


আর বড়োরা তো আগেই বলেছি, এক টি বা দুটি পর্যন্ত উপকারী। হ্যা আপনি চাইলে শুকিয়ে গুঁড়ো করেও খেতে পারেন যা খুবই সুস্বাধু। তবে কাঁচা আমলকি খুবই উপকারী হতে পারে। 


পরিমিত এবং নিয়মিত কাঁচা আমলকি আপনার জন্যে একটি অসাধারণ টনিকের মত কাজ করে থাকে। তাই আমি মনে করি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কাঁচা আমলকি যুক্ত করলে উপকার ছাড়া উপকার হবে না। তবে মনে রাখবেন, কখনোই বাড়াবাড়ি ভালো নয়। 

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা


খালি পেটে কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক, যা বলে শেষ করা যাবে না। আপনি যদি সকালে উঠে খালি পেটে একটি বা দুটি আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করেন, তাহলে আপনার পেটের হজমের কাজ শুরু হবে খুবই দ্রুত এবং মেটাবলিজম বেড়ে যাবে অনেকগুন। তাছাড়াও সতেজ থাকবেন পুরোদিন। 


খালি পেটে কাঁচা আমলকি খেলে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায় খুবই দ্রুত। যার ফলে আপনার শরীর থাকবে সতেজ এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ছড়াবে অনেক। 


আর যারা দেহের ওজন কমানোর ব্রত নিয়েছেন তাদের জন্যে কাঁচা আমলকি হতে পারে আশীর্বাদ। কারণ খালি পেটে কাঁচা আমলকি শরীরে ফ্যাট জমাতে বাধাগ্রস্থ করে। 


খালি পেটে কাঁচা আমলকি খাওয়া সুস্থ মানুষের জন্যে খুবই নিরাপদ সাথে অত্যন্ত উপকারী। তবে কারো যদি আগে থেকে পেটের সমস্যা যেমন এসিডিটি অতিরিক্ত হয়ে থাকে তাদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। 

কাঁচা আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা


কাঁচা আমলকির মধ্যে যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন খাওয়ার জন্যে নিয়ম ও রয়েছে । কাঁচা আমলকি খাওয়ার নিয়মের মধ্যে আমরা যা অনুসরণ করার অনুরোধ করে থাকি তা হলো, সকালে খালি পেতে এক বা দুটি কাঁচা আমলকি ভালোভাবে ধূয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং ছোট ছোট টুকরো করে লবন দিয়ে খেতে পারেন। 


আবার অনেকে মধু মিশিয়ে ও খেয়ে থাকেন। এতে করে খেতে খুব স্বাদ পাওয়া যায় তেমনি হজমের জন্যে ও খুবই সহজ হয়ে থাকে। তবে সকালে খালি পেটে এক বা দুটি কাঁচা আমলকি খাওয়া ভালো আর তা নাহলে দুপুরের বেলায় ও খাওয়া যেতে পারে। 

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতাগুলি


  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে  
  • ত্বক ও চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে   
  • চুল পড়া কমিয়ে আনে   
  • ব্লাড সুগার ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে  
  • শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করে 


পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার সাথে সাথে আমলকি খেলে শরীরের ভেতরের সব অশুদ্ধি দূর হয়। এই ছোট্ট ফলটির নিয়মিত ব্যবহার স্বাস্থ্যকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে।

কাঁচা আমলকি খাওয়ার ক্ষতিকর দিক


প্রতিটা জিনিসের ভালো এবং ক্ষতিকর দিক থাকে সেখানে কাঁচা আমলকি ও পিছিয়ে নেই। কাঁচা আমলকি স্বাস্থ্যকর হলেও এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। 


যেমন অতিরিক্ত কাঁচা আমলকি খেলে পেটের গ্যাস, এসিডিটি এবং ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। যাদের পূর্বে থেকেই পাকস্থলীর সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যে কাঁচা আমলকি বেশি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। 


আবার অনেক সময় কাঁচা আমলকি বেশি খাওয়ার ফলে রক্তপাতের মত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বিশেষ করে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করছেন তাদের জন্যে। এইক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কাঁচা আমলকি খাওয়া সুবিধার নাও হতে পারে। 


যাদের শরীরের এলার্জির প্রবণতা বেশি তাদের ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা বজায় রাখা জরুরি। এর কারণ হচ্ছে কাঁচা আমলকিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা এলার্জি তৈরিতে দায়ী বলে মনে করা হয়। 


সর্বোপরি বলা যায় যতই ভালো কিছু হোক না কেন, কোন খাবারই অতিমাত্রায় ভালো নয়। নিয়মিত এবং পরিমিত খাওয়া হলো  সুস্থ থাকার আসল চাবিকাঠি। 

আমলকি কখন খাওয়া উচিত


সবকিছুর সঠিক ব্যবহার রয়েছে, কারণ এতে করে এর গুনাগুন খুবই কাজে লাগে। কাঁচা আমলকির ক্ষেত্রে ও তাই। সকালে খালি পেটে ১-২টি কাঁচা আমলকি খাওয়া সবচেয়ে উত্তম । এর ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাই , শরীর সতেজ হয় এবং সারাদিন এনার্জি থাকে।  


তবে আপনি চাইলে দুপুরের খাবারের পরও আমলকি খেতে পারেন , বিশেষ করে যাদের হজমের সমস্যা আছে। রাতে ঘুমানোর আগে আমলকি না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে এবং ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।  


এছাড়া শরীর দুর্বল লাগলে, ক্লান্তি আসলে বা রোগ থেকে সেরে উঠার সময়ও আমলকি খাওয়া দারুণ উপকারী। সব মিলিয়ে দিনের প্রথমভাগে আমলকি খাওয়া সবচেয়ে বেশি সুফল দেয়।

কাঁচা আমলকি খেলে কি হয় এই নিয়ে শেষ কথা 


" কাঁচা আমলকি খেলে কি হয় " এই কথার উপর ভিত্তি করে আমরা কাঁচা আমলকির আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করেছি যেন, পাঠকের কোন অসুবিধা বা হয়। পাঠকরা পড়তে এসে যা খুঁজে পাচ্ছে না তও বিশ্লেষণ করা চেষ্টা করেছি। 


তাই পরিশেষে বলবো, এরপর ও আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আমরা আছি আপনাদের পাশে সর্বক্ষণ এবং সর্বাবস্থায়। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং প্রতিদিন এক বা দুইটি করে কাঁচা আমলকি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেবন।  


অতিরিক্ত আমলকি খেলে যাদের সমস্যা হতে পারে 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪