কাটা জায়গা শুকানোর ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায় যা প্রাকৃতিকভাবে ইনফেকশন মুক্ত
সূচীপত্রঃকাটা জায়গা শুকানোর ঘরোয়া উপায় | দৈনন্দিন কর্মব্যস্ত জীবনে নানা ভাবে অসতর্কতার মাধ্যমে আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে যায়। সেই কাটা জায়গা যদি দীর্ঘদিন অবহেলার কারণে না শুকায় তাহলে বাধে বিপত্তি। এই নিবন্ধে আমাদের অসতর্কতার মাধ্যমে শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে, সেই "কাটা জায়গা শুকানোর ঘরোয়া উপায়" নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।
আরো থাকছে কাটা জায়গা শুকানোর মলম, কাটা জায়গা শুকানোর মলম, ডায়াবেটিস রোগীর কাটা জায়গা শুকানোর উপায়, কাটা জায়গা শুকানোর ড্রেসিং করার ঔষধ, কাটা জায়গা তাড়াতাড়ি শুকানোর এন্টিবায়োটিক এবং কাটা জায়গা শুকানোর খাবার। তাই সঙ্গে থাকুন সচরাচর কাটা ছেড়া নিয়ে ভালো কিছু জানতে পারবেন আশা করি আমার পাঠক বন্ধুরা।
কাটা জায়গা শুকানো কেন জরুরি
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে শরীরের নানা জায়গায় কাঁচা ছেঁড়া ছোটখাট ভাবে হয়ে থাকে এইটা হয় স্বাভাবিক। অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে, রান্না করতে গিয়ে এমনকি খেলাধুলা করতে গিয়েও আমাদের শরীরে যেকোন জয়গায় কেটে যেতে পারে।
কেটে যাওয়াটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে সেই কাটা জায়গাটা না শুকায় তাহলে বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন কাটা জায়গা যদি স্যাঁতসেঁতে থাকে বা ভিজা থাকে, তাহলে জীবানু বাসা বাঁধতে পরে খুব সহজে। যার কারণে কাটা জায়গায় ইনফেকশন হয়ে পুঁজ এবং ব্যথা হতে পারে সাথে জ্বর ও হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর কাটা জায়গা শুকানোর ৭টি কার্যকর ঘরোয়া উপায়
কাটা জায়গা শুকানোর ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে ডায়বেটিস রোগীদের শরীরে যদি কোন অংশ কেটে যায় তাহলে একটু চিন্তার বিষয় থেকেই যায়। কারণ ডায়বেটিস রোগীদের রক্তে গুকোজের আধিক্য বেশি থাকায় সহজে শুকায় না।
যার দরুন খুব সহজে সংক্রমণ থেকে শুরু করে খুবই বিপদের আশংকা থাকে বেশি। এমনকি ডায়বেটিস রোগীদের যে স্থান কেটে গেছে সে স্থান অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করার দরকার হয়ে পড়ে। চলুন তাহলে আমরা জেনে আসি ডায়াবেটিস রোগীর কাটা জায়গা শুকানোর ৭টি কার্যকর উপায় সম্পর্কে।
- ডায়বেটিস রোগীর ক্ষত বা কাটাস্থান ভালো করে পরিষ্কার পানি ও এন্টিসেপ্টিক দিয়ে ভালো করে ধুয়ে জীবাণু মুক্ত করুন।
- ইনফেকশন প্রতিরোধের জন্যে জীবাণুনাশক বা বিটাডিন ব্যবহার করুন।
- কাটা জায়গায় যেন কোনমতে ভেজা না থাকে সেইভাবে শুকনো ব্যান্ডেজ দিয়ে ভালো করে ঢেকে রাখুন।
- রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখুন কারণ বেশি মাত্রায় রক্তে চিনি থাকলে কাটা স্থান শুকাতে বাধা প্রদান করে তাই নিয়মিত মনিটরিং করুন।
- ঘরোয়া ভাবে চাইলে নিমপাতা বা এলোভেরার মত জেল হালকাভাবে লাগাতে পারেন করুন প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে খুবই উপকারী, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা খুবই জরুরি।
- প্রতিদিন ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করা জরুরি কারণ যদি ভিতরে ভেজা বা পুঁজ জমে যায় তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেড়ে যেতে পারে।
- কাটাস্থানে যদি পুঁজ জমে এবং সাথে ব্যাথা হয় ও ফোলাভাব দেখা যায় তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের যাওয়া ভালো।
কাটা জায়গা শুকানোর মলম
কাটা জায়গা শুকানোর জন্যে কিছু সাধারণ এবং জনপ্রিয় মলম রয়েছে যা আমরা অনেকে জানিনা। সাধারণ এন্টিসেপ্টিক মলম দিয়ে ও ঘরোয়া উপায়ে কাটা জায়গা শুকানোর যায়। কাটা জায়গা শুকানোর মলম ও ঘরোয়া উপায়ের মধ্যে পড়ে।
কাটা ছেঁড়া স্বভাবিক ব্যাপার হলেও আমরা চাইলে কাটা জায়গা শুকানোর জন্যে বা ইনফেকশনের না হওয়ার জন্যে কিছু এন্টিসেপ্টিক মলম ব্যবহার করতে পারি। বাজারে অনেক রকম মলম পাওয়া যায় ক্ষত শুকানোর জন্যে অথবা জীবাবু দূর করার জন্যে ও। যেমন
পোভিডোন-আয়োডিন
বিটাডিন ( Betadine )
সোফ্রামাইসিন ( Soframycin )
বা ফুসিডিন ( Fucidin )
উপরের এই মলমগুলি খুবই উপকার এইগুলি বিশেষকরে ইনফেকশন প্রতিরোধ করার জন্যে খুবই কার্যকরী এবং জীবাণুনাশক হিসেবে ও ভালো কাজ করে থাকে। তবে সোফ্রামাইসিন বা ফুসিডিন নামক এই মলমগুলি পুঁজ হওয়া থেকে রোধ করে এবং দ্রুত শুকিয়ে তুলে।
কাটা জায়গা শুকানোর ড্রেসিং করার ঔষধ
শরীরের কোন অংশে যদি কাটা পড়ে তাহলে শুকানোর জন্যে খুব দ্রুতই ড্রেসিং করার ঔষধ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কারণ কেটে বা ছিঁড়ে যাওয়া অংশে যদি ভালো করে যত্ন না নেওয়া হয় তাহলে সহজে জীবানু প্রবেশ করে ইনফেকশন হতে পারে। এই কারণে ড্রেসিং ও ঔষধ ব্যবহার করার খুবই জরুরি।
সর্বপ্রথম কাটা জায়গা ভালো করে হালকা গরম পানি বা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং পোভিডোন আয়োডিন অথবা বিটাডিন জাতীয় জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে দিতে হবে।
এই জীবাণুনাশক ঔষধগুলি খুব সহজে ক্ষত বা কাটা জায়গা শুকাতে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে খুবই সহযোগী। এরপর ড্রেসিংয়ের পরে গজ কাপড় বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ভালো করে ক্ষত জায়গাটা শুকানোর জন্যে ঢেকে দিন।
তবে মনে রাখতে হবে ক্ষত স্থানটি যেন স্যাঁতস্যাতে বা ভেজা না থাকে। যদি দেখেন যে, দীর্ঘদিন ও শুকাচ্ছে না বা পুঁজ ও ব্যথা হচ্ছে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া শ্রেয় বলে মনে করি।
কাটা জায়গা তাড়াতাড়ি শুকানোর এন্টিবায়োটিক
কর্ম জীবনে অনেক সময় আমাদের শরীরে কাটা গেলেও যদি সহজে না শুকায়, তাহলে কাটা জায়গা তাড়াতাড়ি শুকানোর জন্যে এন্টিবায়োটিক ঔষধ খুঁজে থাকি। কারণ তাড়াতড়ি শুকিয়ে গেলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। তবে এই ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম খুবই উপকারী যা খুব দ্রুত জীবানুমুক্ত করে শুকিয়ে তুলে।
এইক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত এন্টিবায়োটিক গুলি হলো
Fusidic Acid বা Fucidin (ফুসিডিক এসিড বা ফুসিডিন)
Neomycin (নিওমাইসিন)
Soframycin (সোফ্রামাইসিন)
কাটা শুকানোর সবচেয়ে প্ৰচলিত এই এন্টিবায়োটিক ঔষধগুলি খুবই কার্যকর এবং জীবাণু সংক্রমণ থেকেও খুব সহজে মুক্তি দেয়। এছাড়াও চামড়ার ঘষা লাগা র মাধ্যমে ছিঁড়ে গেলেও উপরোক্ত এন্টিবায়োটিক ঔষধ গুলি লাগালেই কয়েকদিনের মধ্যে ক্ষত শুকিয়ে আসে।
প্রাকৃতিকভাবে জীবাণুনাশক কাটা জায়গা শুকানোর জনপ্রিয় ও কার্যকর ঘরোয়া উপায়
শরীরের কোন স্থান অসতর্কতার দ্বারা কেটে গেলে সেই, কাটা স্থানকে শুকানোর জন্যে কিছু জনপ্রিয় ও কার্যকরী উপায় রয়েছে যা এতদিন আমাদের অনেকের মধ্যে অজানা রয়েছে। এই উপায়গুলি দিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের কেটে যাওয়া অংশকে সহজে শুকাতে পারি। চলুন তাহলে দেখা যাক।
- প্রাকৃতিকভাবে হলুদে রয়েছে এন্টিস্যাপ্টিক উপাদান এবং নারিকেল তেলের রয়েছে আদ্রতা বজায় রাখার ক্ষমতা। তাই এক সিমটি হলুদ গুড়ি এক চামচ সামান্য গরম তেলের সাথে মিশিয়ে ক্ষত বা কাটা জায়গায় দিনে ২ বার করে লাগাতে পারেন।
- বিশুদ্ধ মধু খুবই উপকারী কাটা স্থান শুকানোর জন্যে। মধ্যে হচ্ছে জীবাণু ধ্বংসকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। মধু কাটা জায়গায় পরিষ্কার করে দিনে দুইবার করে লাগাতে পারেন কারণ মধু নতুন কোষ তৈরী করতে খুবই সাহায্য করে।
- নিমপাতার গুন সবার জানা আছে। নিমপাতা ও এলোভেরা দুটিই জীবাণুনাশ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাটা জায়গা শুকানোর জন্যে নিমপাতা পেস্ট এবং এলোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে কাটা জায়গা লাগাতে পারেন ২ বার করে দিনে।
- প্রতিবার প্রয়োগের আগে উষ্ণ পানি দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করতে হবে এবং পাত্র বা কাপড় যেন জীবাণুমুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
ভেতর থেকে কাটা জায়গা শুকানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস
যদিও আমরা কাটা জায়গা শুকানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে এই আর্টিকেলে বলেছি কিন্তু ভেতর থেকে কাটা জায়গা শুকানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস করাটাও এক্ষেত্রে খুবই জরুরি। শরীরের বাইরের কাটা জায়গা বাহ্যিক চিকিৎসার করলেই শেষ হয় না। দ্রুত শুকানোর জন্যে শরীরে পুষ্টির যোগান দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
কাটা জায়গা শুকানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার উপকারিতা
যখন শরীরে কোনো কাটা বা ক্ষত হয়, তখন সেই ক্ষতস্থানে নতুন কোষ গঠনের জন্য প্রয়োজন পড়ে ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন। পুষ্টিকর খাবার শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি ও উপাদান সরবরাহ করে, যা ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে।
কাটা জায়গা শুকানোর জন্য ভিটামিন C, প্রোটিন ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্ব
ভিটামিন C নতুন টিস্যু তৈরি করতে খুবই সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যেমন টমেটো, লেবু, আমলকী এসব হলো ভালো এবং চমকপ্রদ উৎস।
প্রোটিন নতুন কোষ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিম, মাছ, মাংস, ডাল এসব প্রোটিনের ভালো উৎস।
জিঙ্ক শরীরের ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়ায় সরাসরি কাজ করে। বাদাম, বীজ, দুধ ও গোটা শস্যজাত খাবারে জিঙ্ক পাওয়া যায়।
কাটা জায়গা শুকানোর ঘরোয়া উপায় শেষ কথা
কাটা জায়গা শুকানোর ঘরোয়া উপায়গুলি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এবং এখনো তা অধিক কার্যকর। নারকেল তেল, হলুদ, এলোভেরা এবং মধুর মত ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপাদানগুলি কাটা বা ক্ষত জায়গা নিরাময়ে খুবই সহায়ক। শুধু কাটা জায়গা শুকানো ব্যতিত ইনফেকশন ও রোধ করে। তবে হ্যা মনে রাখতে হবে ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
কাটা স্থান কয়েক দিনের মধ্যে যদি ভালো না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হবে। আর হ্যা আপনাদের মন্তব্য আমাদের জানতে ভুলবেন না। আপনাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার নির্ভর করে আমাদের পরবর্তী জার্নি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url